WhatsApp Channel
Join Now
Telegram Group
Join Now
YouTube Channel
Subscribe

ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের অবদান লেখ।

ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের অবদান লেখ।


Class 10 History
Class 10 History

ভূমিকা:

ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলার হিন্দু জনগোষ্ঠীর এক বড় অংশই ছিল নিম্নবর্ণের দলিত হিন্দু। আবার দলিত হিন্দুদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই নমঃশূদ্র সম্প্রদায় ভুক্ত। 1872-1947 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সমগ্র বঙ্গদেশে ব্যাপক এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল।

আন্দোলনের কারণ:

1. সামাজিক অমর্যাদা:- উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা নম:শূদ্রদের নীচ এবং ঘৃণার চোখে দেখতো।
2. অর্থনৈতিক শোষণ:- দরিদ্র নমঃশূদ্রদের উপর ব্রিটিশ সরকার এবং জমিদাররা প্রচুর পরিমাণে আর্থিক শোষণ চালাতো।
3. দারিদ্রতা:- দারিদ্রতা ছিল নম:শূদ্রদের নৃত্যসঙ্গী, কৃষিকাজ, মাছ ধরা, অন্যের বাড়িতে কাজ এবং দিনমজুর প্রভৃতি কাজে তারা নিযুক্ত থাকতো।
4. অসীম দুর্দশা:- অশিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি তাদের তাদের দুর্দশা কে প্রস্ফুটিত করে।

আন্দোলনের উদ্যোক্তাগণ:

উপরোক্ত কারণের জন্য তারা বিভিন্ন সময় আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। এই আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তারা হলেন- শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুর, মুকুন্দ বিহারী মল্লিক, বিরাট চন্দ্র মন্ডল, যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল প্রমুখ।

আন্দোলনের সূত্রপাত:

ফরিদপুরের বাখরগঞ্জে 1872-1873 খ্রিস্টাব্দে একটি শ্রদ্ধানুষ্ঠানে উচ্চবর্ণের লোকেরা আমন্ত্রিত হন। কিন্তু নমঃশূদ্র কর্তৃক শ্রদ্ধানুষ্ঠানে উচ্চহিন্দুরা আসেনি। এর ফলে নমঃশূদ্ররা অপমানিত হন। এই জন্য তারা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সমস্ত কাজ ত্যাগ করে শুরু হয় নমঃশূদ্র আন্দোলন।

বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগ:

1. মতুয়া ধর্মীয় সংগঠনের ভূমিকা:-
শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর তার অনুগামীদের মধ্যে “মতুয়া” ধর্মের ভাবধারা সম্পর্কে সচেতন হন এবং ঐক্যবদ্ধ নমঃশূদ্র আন্দোলন করার ডাক দেন। এক্ষেত্রে গুরুচাঁদ ঠাকুরের ভূমিকা ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নমঃশূদ্রদের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যাত্রাগান, পালাগান প্রভৃতি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
2. অন্যান্য নমঃশূদ্র সংগঠন:-
বিভিন্ন নমঃশূদ্র সংগঠন গড়ে ওঠে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল “নমঃশূদ্র ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন”, “নিখিলবঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি”, বঙ্গীয় দলিত শ্রেণি সমিতি। এসব সংগঠন বিভিন্ন স্থানে সম্মেলনের আয়োজন করে।

রাজনৈতিক দাবি:
  • 1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গকে তারা সমর্থন করে।
  • সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্বের দাবি।
  • গোলটেবিল বৈঠকে বেশি সংখ্যক দলিত প্রতিনিধি গ্রহণের দাবি।
  • আম্বেদকরের প্রতীক নির্বাচনের দাবি ও সরকারের “সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা” নীতিকে সমর্থন করে।
  • সরকারি চাকরিতে নিয়োগের দাবি(1907)।
  • “চন্ডাল” নাম বদলে “নমঃশূদ্র” নামের জন্য দাবি।

ভারতে দলিতদের পরিচয় এবং অধিকার আদায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ:
প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় সমাজের উচ্চবর্ণ বিভিন্ন অধিকার ও মর্যাদা ভোগ করলেও দলিতরা তা থেকে বঞ্চিত হত। তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল।

পরিচিতি:
ব্রিটিশ আমলে 1872 খ্রিস্টাব্দে প্রথম ভারতীয় আদমশুমারীতে জন্ম ও মর্যাদানুসারে ভারতীয় হিন্দুদের বেশি শ্রেণী বিভাগ করা হত। তদানুযায়ী নিম্নবর্নরা হরিজন, নমঃশূদ্র প্রভৃতি সম্প্রদায় দলিত হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এই আদমশুমারী অনুযায়ী এই অস্পৃশ্যদলিত হিন্দুদের পরিমাণ ছিল 13%।

বিভিন্ন পদক্ষেপ:

উচ্চ বর্ণের শোষণ, অত্যাচার, বঞ্চনা সহ্য করেছিল নিম্নবর্ণের হিন্দুরা। বিভিন্ন সময় তারা অস্পৃশ্যতার স্বীকার, মন্দিরে প্রবেশের বাধা প্রাপ্ত হয়েছিল। তাই ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সমাজ সংস্কারক দল দলিতদের অধিকার আদায়ের দাবি হয়েছিল।

1. দক্ষিণ ভারত:- মহারাষ্ট্রের জ্যোতিবা ফুলে প্রতিষ্ঠিত সত্যশোধক সমাজ(1873) এবং মাদ্রাসায় T.S Nayar এবং P.T Chetti জাস্টিন পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন(1917)।
2. পাঞ্জাব:- পাঞ্জাবের দলিতদের অধিকারের দাবিতে শিখ সম্প্রদায়ের উদ্যোগে আকালী আন্দোলন এবং নামকানা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল।
3. কংগ্রেসের আন্দোলন:- 1920-1922 খ্রিস্টাব্দে অহিংসা অসহযোগ আন্দোলন কালে গান্ধীজি দলিতদের অবহেলা বিরুদ্ধে হরিজন আন্দোলন শুরু করে।
4. দলিত শ্রেণীর উদ্যোগ:- কেরালার নারায়ণ গুরুর নেতৃত্বে ভাইকম সত্যাগ্রহ, গুরু বায়ুর মন্দিরে প্রবেশের আন্দোলন, আত্মসম্মান আন্দোলন, বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলন প্রভৃতি।
5. বি. আর. আম্বেদকরের বিশেষ ভূমিকা:- দলিত নেতা বি. আর. আম্বেদকর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বহিষ্কৃত হিতকারিণী সভা(1924) এবং সর্বভারতীয় নিপীড়িত শ্রেণীর কংগ্রেস(1930) প্রভৃতি দলিতদের অধিকার আদায় প্রসঙ্গে আন্দোলন করেন। তিনি বিভিন্ন দলিতদের নিয়ে গড়ে তোলে “Schedule Caste Fedaration (1942)”
6. বাংলায় দলিতদের পদক্ষেপ:- হরিচাঁদের পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুরের উদ্যোগে নমঃশূদ্র ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ও নিখিলবঙ্গ নমঃ সম্মেলন গড়ে ওঠে। এইসব সংগঠন বাংলার দলিতদের দাবী আদায়ে বিভিন্ন আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন।

উপসংহার:
সবশেষে বলা যায়, দীর্ঘ আন্দোলনের ফলস্বরূপ হিসেবে তারা কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার লাভ করে। কিন্তু পরবর্তীকালে দেশ বিভাগের সময় নমঃশূদ্রদের স্থায়ী বাসস্থান নিয়ে সংকটে পড়েছিল। বাংলাদেশের মুসলিমদের তারা নির্যাতিত হয়ে তারা পশ্চিমবঙ্গে বসবাস শুরু করে।

আরও জানুন:

■ More Posts from -
Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url