মহাবিদ্রোহ বা সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ গুলি লেখ?

Arpan

মহাবিদ্রোহ বা সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ গুলি লেখ?

মহাবিদ্রোহ বা সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ গুলি লেখ?

অথবা

কী কী কারনে ১৮৫৭ এর বিদ্রোহ বিফল হয়েছিল?

 
Class 10 History
Class 10 History
ভূমিকা:

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহ ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম ব্যাপক সংগ্রাম রূপে অভিনন্দিত হয়েছিল। যদিও এই বিদ্রোহ উত্তর ভারতের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গণ সংগ্রামের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এবং এক বছরের মধ্যেই এই বিদ্রোহ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে ফেব্রুয়ারি বহরমপুর সেনানিবাসে এই বিদ্রোহের সূচনা ঘটে। এই সূচনার এক বছর পাঁচ মাস পরে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে এই বিদ্রোহের অবসান ঘটে।

মহাবিদ্রোহের প্রধান উদ্দেশ্য সামাজিক অসন্তোষ, রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি আপত্তি, বা রাজনৈতিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে একটি নিজেস্ব অভিজ্ঞান হতে পারে। এর মধ্যে বিদ্রোহকারী গোষ্ঠী সাধারণভাবে সরকারের প্রতি বিরোধ প্রকাশ করতে এবং স্বতন্ত্রভাবে বা সহযোগিতা প্রদান করতে পারে।

সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার পশ্চাতে একাধিক কারণ বিদ্যমান:

1. দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাব:- তাতিয়াটোপি, লক্ষীবাঈ, নানা সাহেব, কুনওয়ার সিং প্রমুখ নেতৃবৃন্দের থেকেই ইংরেজদের লরেন্স, নিকলসন, হ্যাডলক, ক্যামবেল প্রমুখ নেতৃবৃন্দ সুদক্ষ অভিজ্ঞ ছিলেন, তাই সিপাহীরা হেরে গিয়েছিল।

2. আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা:- এই বিদ্রোহ মূলত উত্তরপ্রদেশেও তার কাছাকাছি অবস্থিত অঞ্চলগুলিতে সীমাবদ্ধ ছিল। পাঞ্জাব, সিন্ধু, রাজ পুতানা এই বিদ্রোহ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল।

3. জাতীয়তাবাদের অভাব:- সিপাহীদের মধ্যে একতা গড়ে উঠেনি। বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহের মধ্যে যোগাযোগের অভাব ছিল তাই ঐক্য ও সংহাত শক্তিশালী রূপ পায়নি।

4. দেশীয় রাজাদের বিরোধিতা:- সাধারণ দেশীয় নৃ-পতিরা এই বিদ্রোহে যোগদান করেনি। যেমন- গোয়ালিয়র এর সিন্ধিয়া, কাশ্মীরের মহারাজা, হায়দ্রাবাদের মন্ত্রী প্রভৃতি শক্তিশালী নৃ-পতিরা ইংরেজদের অকুণ্ঠ সাহায্য করেছিল। তারা ইংরেজদের পক্ষে অবিচল ছিল।

5. উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা:- ইংরেজদের অধীনে টেলিগ্রাফ ও যাতায়াত ব্যবস্থার কৃতিত্ব থাকায় তারা সহজে বিদ্রোহের উপর নজর রাখতে পারতো এবং পরিকল্পনা মাফিক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পেরেছিল। “The Times” পত্রিকার মতে- টেলিগ্রাফ না থাকলে ইংরেজরা তাদের বিজয়ের অর্ধেকেরই অর্জন করতে পারতেন না।

6. শিক্ষিত শ্রেণীর ভূমিকা:- এ দেশের শিক্ষিত গোষ্ঠী ইংরেজ সরকারের অবসান হোক এটা একদমই চাইতো না। তাদের মধ্যে ইংরেজ শাসন ভারতবর্ষ ও ভারতবর্ষের মানুষের পক্ষে আশীর্বাদ স্বরূপ।

7. নৌ শক্তির ব্যবহার:- সামুদ্রিক নৌ বহরে ইংরেজরা শক্তিশালী হওয়ায় তারা অত্যন্ত দ্রুত নিজেদের দেশ থেকে প্রয়োজনে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসার সুবিধা নিয়েছিল।

8. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহনের অক্ষমতা:- সিপাহীদের না ছিল আক্রমণের কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা, না ছিল কোন দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা। বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহী নেতাদের মধ্যে সিদ্ধান্ত বিনিময়ের কোন ইচ্ছায় তাদের ছিল না। তাই কোন কেন্দ্রীভূত নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি।

9. ইংরেজদের কূটনীতি:- ব্রিটিশের কূটনীতি প্রয়োগ তাদের জয়কে সহজ করে তুলেছিল। তারা ছলে-বলে-কৌশলে কিছু সম্প্রদায়কে ভয় ও লোভ দেখিয়ে নিজেদের দলে নিয়ে বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হয়েছিল।

10. প্রশাসনিক দক্ষতা এবং তথ্যাদির অভাব:- মহাবিদ্রোহ সফল হতে পারে যদি সরকারে প্রশাসনিক দক্ষতা এবং তথ্যাদির অভাব থাকে। প্রশাসনিক দক্ষতা এবং সঠিক তথ্য সম্প্রদায়কে বিদ্রোহ এবং বাণিজ্যিক কর্মসূচিতে হত্যা করতে পারে।

মন্তব্য:-

সর্বোপরি এই বিদ্রোহেই অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মনে আলাদা উদ্দেশ্য ছিল। একদিকে মুসলিম সিপাহীরা কীভাবে মুঘল শক্তির পূর্ণ প্রতিষ্ঠা ঘটানো যায় এবং হিন্দুরা কিভাবে পেশোয়া রাজ্যের পুণ্য: প্রতিষ্ঠা ঘটানো যায় তা তারা ভাবত। ঐতিহাসিক তারা চাঁদ এর মতে “এই ব্যর্থতা কোন আকস্মিক ব্যাপার নয়, তা অনিবার্য ছিল”।

Post a Comment

এই তথ্যের ব্যাপারে আরো কিছু জানা থাকলে বা অন্য কোনো প্রশ্ন থাকলে এখানে লিখতে পারেন ।