বন্ধুরা আজকে আমি নিয়ে এসেছি বিজ্ঞান এর একটি গুরুত্বপূর্ণ topic নিয়ে। আজকে আমরা আলোচনা করবো ছত্রাক সম্পর্কে। ছত্রাক এর ধারণা, বসতি, বৈশিষ্ট্য, দৈহিক গঠন, কোশের গঠন, জনন, প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহে রোগ সৃষ্টিকারী ছত্রাক সমূহ সবকিছু নিয়ে আলোচনা করেছি নিচে। এই প্রশ্নের উত্তরটি আমার খুবই উপকার করেছে। তো বন্ধুরা তাই বলছি আপনারাও এই প্রশ্নের উত্তরটি অনুসরণ করুন অবশ্যই। যদি আপনার উত্তরটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি সেভ করে রাখতে পারেন এবং বাকি বন্ধুদের share ও করতে পারেন।
ছত্রাক
ছত্রাক-এর ধারণা (Concept of Fungi)
ছত্রাক (Fungus) একটি ল্যাটিন শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ 'মাশরুম' (mushroom) বা ব্যাঙের ছাতাসদৃশ বস্তু। উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহে এরা নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করে। অবশ্য বহুসংখ্যক ছত্রাক জীবকূলের প্রভূত উপকারও করে থাকে। পৃথিবীতে আনুমানিক 90,000 প্রজাতির ছত্রাক আছে। জীববিজ্ঞানের যে যার ছত্রাক বিষয়ে অধ্যায়ন করা হয় তাকে মাইকোলজি (Mycology [গ্রিক]; mukes = mushroom + logia = Knowledge) বলে।
1959 খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকান ট্যাক্সোনমিস্ট R. H. Whittaker জীবজগতকে পাঁচটি রাজ্যে শ্রেণিবিন্যাস্ত (Five Kingdom Classification) করেন। সেই অনুসারে ছত্রাক (Fungus) একটি সতন্ত্রজগৎ হিসেবে বিবেচিত (অন্যান্য জগৎগুলি হলো- মনেরা, প্রোটিস্টা, প্ল্যান্টি এবং অ্যানিম্যালিয়া)। বিশিষ্ট ছত্রাকবিদ Alexopoulus -এর সংজ্ঞানুযায়ী ক্লোরোফিলবিহীন, নিউক্লিয়াস যুক্ত অভাস্কুলার, মাইসিলিয়ামবিশিষ্ট গঠন যাদের প্রাচীর কাইটিন ও সেলুলোজে নির্মিত বেং যারা অযৌন ও যৌন উপায়ে বংশ বৃদ্ধি করে তাদের ছত্রাক বলে।
1974 খ্রিষ্টাব্দে Dr. Lynn Margulis ফানজাই জগৎকে পাঁচটি ফাইলাম-এ বিভক্ত করেন। এই ফাইলামগুলো হলো- [1] Zygomycota, [2] Ascomycota, [3] Basidiomycota [4] Deuteromycota, [5] Mycophycophyta.
ছত্রাক-এর বসতি (Habitat of Fungi)
ছত্রাকের বাসস্থান বিচিত্র ধর্মী। মাটি, জল, বায়ু, উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহ, পচনশীল জীবদেহ বা দেহাবশেষ প্রভৃতি সর্বত্র স্থানেই ছত্রাক বসবাস করে। স্থলজ ছত্রাক সাধারণত জৈব পদার্থ বিশেষত হিউমাস-সমৃদ্ধ মাটিতে এবং জলজ ছত্রাক সাধারণত জলে অবস্থানকারী জীবসমূহের পচনশীল মৃতদেহের উপর বসবাস করে।
ছত্রাক-এর বসতি |
ছত্রাক-এর বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Fungi)
অঙ্গজ গঠন
[1] ছত্রাক থ্যালোফাইটা জাতীয় উদ্ভিদ অর্থাৎ ছত্রাকের মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভেদিত হয় না।
[2] এককোষী ছাড়া প্রায় সব ছত্রাকের দেহ শাখাহীন বা শাখান্বিত সুতার মত হাইফি (Hyphae) দিয়ে গঠিত।
[3] এদের দেহে কোন ক্লোরোফিল থাকে না বলে এরা নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করতে পারে না।
[4] ছত্রাক পরজীবী, মৃতজীবী বা মিথোজীবী এবং শোষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য গ্রহণ করে।
[5] ছত্রাকের কোষপ্রাচীর প্রধানত কাইটিন (chitin) দিয়ে গঠিত। যদিও, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেলুলোজ থাকে।
[6] ছত্রাকের দেহের অভ্যন্তরে কোন পরিবহন কলা (vascular tissue) নেই।
[7] এদের কোশের প্রধান সঞ্চিত পদার্থ গ্লাইকোজেন। তবে, কখনো কখনো কোশে কিছু পরিমাণ ভলিউটিন এবং চর্বিও থাকতে পারে।
[৪] ছত্রাক সাধারণত চলাফেরা করতে পারে না; তবে কিছু কিছু জনন কোশ (zoospore) চলনক্ষম।
[9] ছত্রাকের জননাঙ্গ এককোষী।
[10] স্ত্রী জননাঙ্গে থাকা অবস্থায় জাইগোট বহুকোশী ভ্রুণে পরিণত হয় না; জাইগোট-এ মিয়োসিস ঘটে।
[11] এরা প্রধানত স্পোর উৎপাদনের মাধ্যমেই জনন ঘটায়। যা অযৌন ও যৌন পদ্ধতিতে উৎপন্ন হয়।
[12] ছত্রাকের সূত্রকগুলো কেবলমাত্র অগ্রভাগ দিয়ে বৃদ্ধি পায়।
[13] ছত্রাকের অভিযোজন ক্ষমতা তীব্র।
[14] ছত্রাক সাধারণত স্যাঁতসেঁতে, আর্দ্রতাপূর্ণ ও ছায়াযুক্ত স্থানে জন্মায়।
ছত্রাক-এর দৈহিক গঠন (Vegetative Structure of Fungi)
[1] ছত্রাক-এর দেহ থ্যালয়েড (thalloid)। এই থ্যালাস এককোষী বা বহুকোশী হতে পারে।
[2] কয়েকটি এককোশী ছত্রাক (ঈস্ট) এবং সরলতম ছত্রাক (সাইম মোন্ড বা slime mould) ব্যতীত অন্য সকল ছত্রাকের দেহ মাইসেলিয়াম (mycelium) সমন্বয়ে গঠিত হয়।
[3] এককোশীই হোক বা মাইসেলিয়াম-বিশিষ্টই হোক অধিকাংশ ছত্রাক আকারে অতি ক্ষুদ্র আকৃতির হয়। যাদের খালি চোখে দেখা যায় না। তবে খালি চোখে দেখা যায় এমন ছত্রাকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্যাঙের ছাতা।
[4] ছত্রাক ছত্রাক খালি চোখে সাদা তুলার মতো দৃষ্ট হলেও অনুবীক্ষণযন্ত্রে এদেরকে বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট জালের মতোন দেখায়।
[5] আদিম প্রকৃতির নিম্নশ্রেণির ছত্রাকে সিনোসাইটিক মাইসিলিয়াম এবং উচ্চশ্রেণির ছত্রাকে সেপ্টেট মাইসিলিয়াম লক্ষ্য করা যায়।
[6] আদিম প্রকৃতির নিম্নশ্রেণির ছত্রাককে সিনোসাইটিক মাইসিলিয়াম এবং উচ্চশ্রেণির ছত্রাকে সেপ্টেট মাইসিলিয়াম লক্ষ্য করা যায়।
[7] কোনো কোনো ছত্রাকের মাইসেলিয়াম থেকে সুতোর মতো রাইজয়েড উদগত হয়। রাইজয়েড ছত্রাককে আবাসস্থলে আটকে থাকতে সাহায্য করে।
ছত্রাক |
ছত্রাক-এর কোশের গঠন (Cell Structure of Fungi)
কিছু নিম্নশ্রেণির ছত্রাক (স্লাইম মোল্ড) ছাড়া অধিকাংশ ছত্রাকের কোশ দুইটি অংশে বিভক্তㅡ
[1] কোষপ্রাচীর এবং [2] প্রোটোপ্লাস্ট।
[1] কোশপ্রাচীর:
বিভিন্ন শ্রেণির ছত্রাকে কোশপ্রাচীরে ভিন্নতা দেখা গেলেও অধিকাংশ ছত্রাককোশের কোশপ্রাচীরের মূখ্য উপাদান হলো কাইটিন জাতীয় পদার্থ। এছাড়াও লিপিড, মেলানিন ইত্যাদি ছত্রাকের কোশপ্রাচীরে পাওয়া যায়। প্রোটোপ্লাস্টকে সংরক্ষণ করাই কোশপ্রাচীরের প্রধান কাজ। যদিও এই ধরনের কোশপ্রাচীর জল ও অন্যান্য অনেক দ্রবনের জন্যই ভেদ্য।
[2] প্রোটোপ্লাস্ট:
কোশপ্রাচীরের অভ্যন্তরের সমুদয় জীবিত পদার্থকে সমবেতভাবে প্রোটোপ্লাস্ট বলে। কোশঝিল্লি, সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস সহযোগে ছত্রাকের প্রোটোপ্লাস্ট গঠিত।
- কোশঝিল্লি: এটি কোশপ্রাচীরের ভেতরের দিকে অবস্থিত। কোশঝিল্লি মূলত একটি পাতলা জীবিত পর্দা, যা কোশপ্রাচীরের সাথে নিবিড়ভাবে আটকে থাকে। কোনো কোনো স্থানে কোশঝিল্লি ক্ষুদ্র পকেটের আকারে ভাঁজ হয়ে লোেমাজোম গঠন করে।
- সাইটোপ্লাজম: কোশঝিল্লির ভেতরের দিকে জেলি-সদৃশ পদার্থটিই হল সাইটোপ্লাজম। তরুণ মাইসেলিয়াম ও হাইফার শীর্ষদেশে সাইটোপ্লাজম ঘন দানাদার ও সমস্বত্ব। কিন্তু পরিণত মাইসেলিয়ামে সাইটোপ্লাজম অপেক্ষাকৃত পাতলা ও গহ্বরযুক্ত হয়। সাইটোপ্লাজমের অভ্যন্তরে এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, মাইটোকন্ড্রিয়া, গহ্বর ইত্যাদি পাওয়া যায়। তবে, এখানে কোনো প্লাস্টিড থাকেনা। কোনো কোনো ছত্রাকের সাইটোপ্লাজমে গলগি বস্তুর অস্তিত্বও প্রমাণিত হয়েছে। ছত্রাকের সাইটোপ্লাজমে সঞ্চিত খাদ্য হিসেবে গ্লাইকোজেন, ভলিউটিন, তেল ও চর্বি ইত্যাদি লক্ষ্য করা যায়।
- নিউক্লিয়াস: ছত্রাকের সাইটোপ্লাজমে এক বা একাধিক গোলাকার বা উপবৃত্তাকার নিউক্লিয়াস থাকে। প্রতিটি নিউক্লিয়াসের একটি নির্দিষ্ট ও সচ্ছিদ্র নিউক্লিয়ার মেমব্রেন লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসের কেন্দ্রীয় অঞ্চলটি অপেক্ষাকৃত ঘন হয়। কোনো কোনো ছত্রাকবিদ এই কেন্দ্রীয় অঞ্চলটিকে নিউক্লিওলাস হিসেবে গণ্য করেন।
ছত্রাক-এর জনন (Reproduction of Fungi)
জননের ভিত্তিতে ছত্রাককে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
[1] হলোকার্পিক ছত্রাক (Holocarpic fungi): ছত্রাকের সমগ্র দেহ জনন অঙ্গে পরিণত হলে তাদেরকে হেলোেকাপিক ছত্রাক বলে। যেমন- Synchytriam |
[2] 'ইউকার্পিক ছত্রাক (Eucarpic fungi): অধিকাংশ ছত্রাকের সমগ্র দেহ জনন অঙ্গে পরিণত না হয়ে একাংশ জনন অঙ্গে পরিণত হলে, অবশিষ্ট অংশ অঙ্গজ দেহ হিসেবেই থেকে যায়। এই ধরনের ছত্রাককে ইউকার্পিক ছত্রাক বলা হয়। যেমন- Saprolegnia
ছত্রাকে তিনটি পদ্ধতিতে জনন ক্রিয়া ঘটে-[1] অঙ্গয় জনন, [2] অযৌন জনন ও [3] যৌন জনন।
অঙ্গজ জনন (Vegetative Reproduction)
[1] খণ্ডায়ন (Fragmentation): এই প্রক্রিয়ায় ছত্রাকের মাইসেলিয়াম খণ্ডিত হয়ে দুই বা ততোধিক অংশে পরিণত হয় এবং উপযুক্ত পরিবেশে প্রতিটি অংশ এক একটি নতুন মাইসেলিয়াম গঠন করে। যেমন- Penicillium, Rhizopus
[2] মুকুলোদগম (Budding): এই প্রক্রিয়ায় মাতৃকোশের প্রাচীরের যেকোনো স্থান স্ফীত হয়ে মুকুল উৎপন্ন করে। পাশাপাশি নিউক্লিয়াসটি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠন করে। অন্যদিকে কিছু সাইটোপ্লাজমসহ অপত্য নিউক্লিয়াস দুটির একটি মুকুলের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। এবং মুকুলগুলো মাতৃদেহকোশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতন। ছত্রাক গঠন করে। Saccharomyces বা ঈস্ট ছত্রাকে এব প অঙ্গজ জনন লক্ষ্য করা যায়।
[3] দ্বিভাজন (Binary fission): এই প্রক্রিয়া মূলত এককোশী ছত্রাকে লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে অঙ্গজ কোশদেহটি সংকোচনের ফলে বা প্রস্থপ্রাচীর গঠনের মাধ্যমে দুটি অপত্য কোশে বিভক্ত হয়ে যায়। Saccharomyces বা ঈস্ট।
অযৌন জনন (Asexual Reproduction)
একই প্রকার বা বিভিন্ন প্রকার বিশেষ ধরনের কোশ অর্থাৎ স্পোর-এর সাহায্যে ছত্রাকের অযৌন জনন সম্পন্ন হয়। এই স্পোরগুলি বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন-
[1] স্পোরাঞ্জিওস্পোর: অনেক ধরনের ছত্রাক থলির মতো স্পোরাঞ্জিয়ামের মধ্যে স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে। এরূপ স্পোরকে স্পোরাঞ্জিওস্পোর বলে। স্পোরাঞ্জিওস্পোর দুই ধরনের-
- জুস্পোর: স্পোরাঞ্জিয়ামের মধ্যে ফ্লাজেলাযুক্ত সচল স্পোর উৎপন্ন হলে, এদেরকে জুস্পোর বলা হয়। অনুন্নত ছত্রাকে এই ধরনের স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে অযৌন জনন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। যেমন- Phythium, Saprolegnia ইত্যাদি।
- অ্যাপ্লানোস্পোর: স্পোরাঞ্জিয়ামের মধ্যে ফ্ল্যাজেলাবিহীন নিশ্চল স্পোর উৎপন্ন হলে, এদেরকে অ্যাপ্লানোস্পোর বলে। যেমন- Mucor, Rhizopus ইত্যাদি।
[2] কনিডিয়া: হাইফার অগ্রভাগে বা পার্শ্বে উৎপন্ন নগ্নস্পোরকে কনিডিয়া বলা হয়। উন্নত জাতের ছত্রাক কনিডিয়া সৃষ্টি মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে। যেমন- Penicillum, Alternaria, Aspergillus ইত্যাদি।
যৌন জনন (Sexual Reproduction)
অন্যান্য জীবের মতো ছত্রাকের যৌন জননের সময় দুটি সুসঙ্গত (compatible) অর্থাৎ পরস্পরের সাথে মিলনে সক্ষম এমন দুটি হ্যাপ্লয়েড নিউক্লিয়াসের (n) মিলন এবং এইরূপ মিলনের ফলে একটি ডিপ্লয়েড জাইগোট-নিউক্লিয়াসের (2n) উৎপত্তি ঘটে।
ছত্রাকের যৌন জননে তিনটি স্বতন্ত্র দশা বা ধাপ লক্ষ্য করা যায়-
[1] প্লাজমোগ্যামি: প্রথমে দুটি গ্যামেটের সাইটোপ্লাজমের মিশ্রণ ঘটে এবং নিউক্লিয়াস দুটি কাছাকাছি আসে। উদ্ভূত কোষটিকে ডায়কেরিয়ন (n+n) বলে।
[2] ক্যারিওগ্যামি: অনুন্নত ছত্রাকে প্লাজমোগ্যামির পরপরই দুটি নিউক্লয়াসের মিলন বা ক্যারিওগ্যামি ঘটে এবং ডিপ্লয়েড (2n) জাইগোট সৃষ্টি হয়। কিছু উন্নত ছত্রাকে ডাইকেরিয়নের নিউক্লিয়াস দুটি বার বার বিভাজিত হয়ে ডায়কেরিয়টিক মাইসেলিয়াম (n+n) সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে ক্যারিওগ্যামি ঘটে।
[3] মিয়োসিস: ক্যারিওগ্যামির ফলে সৃষ্ট জাইগোটে সাথে সাথে বা কিছুকাল বিশ্রামের পর মিয়োসিস ঘটে এবং পুনরায় জীবন চক্রের হ্যাপ্লয়েড (n) অবস্থায় ফিরে আসে। মিয়োসিস ধাপ বা দশায় ছত্রাকের যৌনজনন তিনটি প্রক্রিয়ায় ঘটতে পারে-
- আইসোগ্যামি: এক্ষেত্রে দুটি গ্যামেট আকার আকৃতিগতভাবে একই রকম; উদাহরণ- ঈস্ট, Synchytrium ইত্যাদি।
- অ্যানআইস্যোগ্যামি: এক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন আকার- আকৃতির সচল গ্যামেটের মিলন ঘটে। ছত্রাকে অ্যানআইসোগ্যামি খুবই কম। উদাহরণ- Allomyces.
- উগ্যামি: এক্ষেত্রে দুটি গ্যামেট্যাঞ্জিয়া (অ্যান্থেরিডিয়াম এবং উগোনিয়াম) -এর সংস্পর্শ ঘটে। নিষেক নালির মাধ্যমে শুক্রাণু উগোনিয়ামে প্রবেশ করে এবং ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়ে জাইগোট সৃষ্টি করে।
বিভিন্ন ছত্রাকের উপকারি ভূমিকা (Beneficial role of different Fungi)
[1] অধিকাংশ ছত্রাক ব্যাকটেরিয়ার সাথে একত্রে মৃত ও গলিত জৈববস্তুর (উদ্ভিদ ও প্রাণিদেহ) উপর জন্মিয়ে এদের পচন ত্বরান্বিত করে। এরূপ পচনের ফলে ঐসব মৃত ও গলিত জৈববস্তু মাটির সাথে সাররূপে মিশ্রিত হয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
[2] নানা প্রকার ঈস্ট জাতীয় ছত্রাক অর্থাৎ Saccharomyces-এর কয়েকটি প্রজাতি এবং Penicillium -এর কয়েক প্রজাতির সাহায্যে মদ, পাউরুটি কেক, পনির প্রভৃতি প্রস্তুত করা হয়।
[3] সাইট্রিক, গ্লুকোনিক, গ্যালিক, ফিউমারিক, গুটামিক, অক্সালিক প্রভৃতি নানান জৈব অ্যাসিড, ভিটামিন এবং কয়েক প্রকার এনজাইম যেমন- ইনভার্টেজ, অ্যামাইলেজ প্রভৃতি প্রস্তুত করতে কয়েক প্রজাতির ছত্রাক বর্তমানে বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।
[4] Mucor rouxii নামক ছত্রাকটিকে শ্বেতসার হতে চিনি প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হয়।
[5] বিভিন্ন ছত্রাক থেকে বর্তমানে বিভিন্ন রকমের জীবাণু প্রতিরোধী (antibiotic) উৎপাদন করা হয়। 1929 সালে স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং সর্বপ্রথম Penicillium notatum নামক ছত্রাক থেকে Penicillin অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেন। বর্তমানে স্ট্রেপটোমাইসিন, ক্লোরোমাইসিটিন, নিউমাইসিন, অ্যাম্ফিসিলিন, অরিওমাইসিন ইত্যাদি নিত্যনতুন অ্যান্টিবায়োটিক ছত্রাক থেকে প্রাপ্ত।
[6] জৈবিক দমনের জন্য শস্যক্ষেত্রে কীটপতঙ্গের দেহে পরজীবীরূপে বাস করে বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক এদের ধ্বংস সাধন করে। এছাড়া মাটি বাহিত জীবাণুদের বিনাশ করতে বিশেষভাবে ছত্রাককে ব্যবহার করা হয়।
[7] ছত্রাকের ফ্রুটবডি সাধারণতভাবে ব্যাঙের ছাতা বা মাশরুম, মোরেল, ট্রাফল প্রভৃতি নামে পরিচিত। যা বর্তমানে উচ্চ প্রশংসিত খাদ্যরূপে ব্যবহৃত হয়। এতে শর্করা ও প্রোটিন এবং নানান খনিজ লবণ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যমান।
[৪] বিভিন্ন প্রজাতির ছত্রাক থেকে ভিটামিন-B গ্রুপের বায়োটিন, প্যান্টেথেক অ্যাসিড, পিরিডক্সিন, রাইবোফ্ল্যাভিন প্রভৃতি ভিটামিন উৎপাদন করা হয়।
[9] গবেষণাগারে ছত্রাকের ব্যবহার বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে জিনতত্ত্বীয় গবেষণায় বিভিন্ন ছত্রাক ব্যবহৃত হয়। Neurospora crassa, N.sitophia প্রভৃতি এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
[10] Gibberalla fuzikuaro নামক ছত্রাক থেকে বৃদ্ধি সহায়ক হরমোন জিবেরেলিন উৎপাদন করা হয়।
[11] Claviceps Purpurea নামক ছত্রাক থেকে ergot তৈরি হয়, যা বিশেষ করে সন্তান প্রসবের পর রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
[12] মানুষের যেকোনো অঙ্গ হয় ট্রান্সপ্রান্ট করতে মৃত্তিকাবাসী ছত্রাক থেকে সাইক্লোস্পোরিন (cyclosporine) ঔষধ তৈরি হয়।
[13] Aspergillus নামক ছত্রাক নামক ছত্রাক ডায়াস্টেজ এবং জৈব অ্যাসিড তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি এই ছত্রাক থেকে স্টেরয়েড পাওয়া যায়, এটি আরথ্রাইটিস নিরাময় করে।
[14] Penicillium griseofulvum নামক ছত্রাক থেকে গ্রিসিওফুলভিন তৈরি করা হয়, যা দাদ বা চর্মরোগ নিরাময় করে।
উদ্ভিদ-দেহে রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকারক উল্লেখযোগ্য ছত্রাক সমূহ
ছত্রাকের নাম - সৃষ্ট রোগ
1. হেলমি্যোম্পোরিয়াম ওরাইজি (Helminthosporium oryzae)- ধানের ব্রাউন স্পট রোগ (Brown spot of Rice)
2. পাকসিনিয়া গ্রামিনিস (Puccinia Graminis)- গমের কৃষ্ণ মরিচা রোগ (Black rust of Wheat)
3. ইউস্টিলাগো ট্রিটিসি (Ustilago Tritici)- গমের লুজ স্মাট রোগ (Loose smut of Wheat)
4. ফাইটোপথোরা ইনফেসট্যান্স (Phytophthora Infestans)- আলুর বিলম্বিত ধ্বসা রোগ (Blight of Potato)
5. পেটালোটিওপসিস থাই (Pestalotiopsis Theae)- চা গাছের ধূসর ধ্বসা রোগ (Gray blight of Tea)
6. ইউস্টিলাগো মেইডিস (Ustilago Maydis)- ভুট্টার স্মাট রোগ (Smut of Corn plant)
প্রাণী-দেহে রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকারক উল্লেখযোগ্য ছত্রাক সমূহ
ছত্রাকের নাম - সৃষ্ট রোগ
1. মাইক্রোস্পোরাম ট্রাইকোফাইটন (Microsporum Trichophyton)- দাদ
2. সারকোপটিস স্কাবেয়ি (Sarcoptes Scabiei)- স্কাবিস
3. ট্রাইকোফাইটন (Trichophyton)- অ্যাথলেটস্ বা ফুট
4. ক্যানডিডা অ্যালবিকানস্ (Candida Albicans)- ক্যানডিডায়াসিস
5. অ্যাসপারজিলাস ফিউমিগেটাস (Aspergillus Fumigatus)- অ্যাসপারজিলোসিস