WhatsApp Channel
Join Now
Telegram Group
Join Now
YouTube Channel
Subscribe

ব্যাকটেরিয়া- বৈশিষ্ট্য, শ্রেণীবিন্যাস, সাধারণ গঠন, জনন

ব্যাকটেরিয়া- বৈশিষ্ট্য, শ্রেণীবিন্যাস, সাধারণ গঠন, জনন

বন্ধুরা আজকে আমি নিয়ে এসেছি বিজ্ঞান এর একটি গুরুত্বপূর্ণ topic নিয়ে। আজকে আমরা আলোচনা করবো ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে। ব্যাকটেরিয়া এর ধারণা, বসতিবৈশিষ্ট্য, শ্রেণীবিন্যাস, সাধারণ গঠন, জনন সবকিছু নিয়ে আলোচনা করেছি নিচে। এটি 2023 মাধ্যমিকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তরটি আমার খুবই উপকার করেছে। তো বন্ধুরা তাই বলছি আপনারাও এই প্রশ্নের উত্তরটি অনুসরণ করুন অবশ্যই। যদি আপনার উত্তরটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনি সেভ করে রাখতে পারেন এবং বাকি বন্ধুদের share করতে পারেন।

ব্যাকটেরিয়া- ধারণা (Concept of Bacteria)

ব্যাকটেরিয়া [গ্রিক শব্দ, Bokterion = Little Rod (ছোট দন্ড)] একধরনের এককোষী আবীক্ষণিক জীব। জীবজগতে এগুলোই সরলতম ক্ষুদ্রতম জীব বলে পরিচিত। 

1675 খ্রিস্টাব্দে ওলন্দাজ বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ভ্যান লীউয়েনহুক (Antony Van Leeuwenhock) তার আবিষ্কৃত সরল অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে এক ফোঁটা বৃষ্টির জলে সর্বপ্রথম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি এর নাম দেন animalcule বা ক্ষুদ্র প্রাণী। 

1683 খ্রিষ্টাব্দের 17 সেপ্টেম্বর লন্ডন রয়‍্যাল সোসাইটিতে তিনি অঙ্কনের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার তিনটি আকৃতি প্রকাশ করেন। তাই তাঁকে ব্যাকটেরিলজি প্রোটোজুওলজির জনক বলা হয়।

 1829 খ্রিস্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী সি.জি.এরেনবার্গ (C.G.Ehrenberg) সর্বপ্রথম "Bacteria" শব্দটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীকালে 1864 খ্রিস্টাব্দে ফরাসী বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) 1876 খ্রিস্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী রবার্ট কচ (Robert Koch) প্রমাণ করেন যে অত্যন্ত ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক জীব বিভিন্ন প্রাণিদেহে নানা রকম রোগ সৃষ্টিতে সক্ষম।

 1879 খ্রিস্টাব্দে ইলিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্জিল নামক একজন গবেষক সর্বপ্রথম প্রমাণ করেন ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদেও রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম।

ব্যাকটেরিয়া হল, কোশীয় অঙ্গাণুবিহীন, জটিল কোশপ্রাচীর আদিপ্রকৃতির (prokaryotic) নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট ক্ষুদ্রতম সরল প্রকৃতির এককোষী আণুবীক্ষণিক জীব।

বিস্তৃতি আবাসস্থল (Evolution of Coronavirus)

ব্যাকটেরিয়ার বিস্তৃতি প্রায় বিশ্বব্যাপী। এরা মাটি, বায়ু, জল, জীবদেহের ভিতর বাইরে অবস্থান করে। মানুষের অন্ত্রেও এদের পাওয়া যায়। এর মধ্যে E.coli ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স সরবরাহ করে। 

প্রকৃতিতে -17°C সেলসিয়াস তাপমাত্রা থেকে শুরু করে 80°C তাপমাত্রা পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকতে পারে। জল বা মাটিতে জৈব পদার্থ বেশি থাকলে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যাও সেখানে অধিক থাকে। 

জৈব পদার্থসমৃদ্ধ আবাদি মাটিতে জলে ব্যাকটেরিয়া পরিমাণ বেশি থাকে। মাটির গভীরতা অনুযায়ী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। বাতাসে থাকলেও বায়ুল অনেক উচুতে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি তেমন নেই।

ব্যাকটেরিয়া- বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Bacteria)

[1] ব্যাকটেরিয়া কোশীয় জীবদের মধ্যে অতি ক্ষুদ্র (0.2-5.0 nm), সরল এবং আণুবীক্ষণিক (microscopic)

[2] এরা এককোশী জীব। তবে এরা একক বা দলবদ্ধ হয়ে থাকে।

[3] ব্যাকটেরিয়ার প্রোটোপ্লাজম আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত (prokaryotic nucleus), অর্থাৎ নিউক্লিয়াসে নিউক্লিয়ার ঝিল্লি, নিউক্লিওলাস ক্রোমাটিন জালিকা থাকে না। শুধু সাইটোপ্লাজমে একটি প্যাঁচানো দ্বিসূত্রক DNA আবর্তাকারে থাকে। একে নিউক্লিওয়েড (nucleoid) বা সিউডোনিউক্লিয়াস বলে।

[4] প্রোটোপ্লাজমে কেবল রাইবোজোম (70S) মেসোজোম থাকে। ব্যাকটেরিয়ায় একক পর্দাবত কোনো কোশ-অঙ্গাণু থাকে না।

[5] ব্যাকটেরিয়া কোশে কোশঝিল্লির বাইরে একটি সুগঠিত কোশপ্রাচীর রয়েছে, যার প্রধান উপাদান মিউকোপেপটাইড বা পেপটাইডোগ্লাইক্যান এবং গৌণ উপাদান প্রোটিন, লিপিড, পলিস্যাকারাইড, মুরামিক এসিড টিকোয়িক এসিড প্রভৃতি থাকে।

[6] কোশপ্রাচীরের বিভিন্ন স্থানে 1µm ব্যাসের ছিদ্র লক্ষ্য করা যায়।

[7] অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া পরভোজী (heterotrophic) আবার কিছু স্বভোজী (autotrophic) ব্যাকটেরিয়াও থাকে। স্বভোজী ব্যাকটেরিয়ার দেহে বিভিন্ন সালোকসংশ্লেষীয় রঞ্জক (যেমন- ব্যাকটেরিওভিরিডিন এবং ক্যারোটিনয়েড) উপস্থিত থাকে।

[] এদের কতক বাধ্যতামূলক অবায়বীয় (obligate anaerobes) অর্থাৎ অক্সিজেন থাকলে বাঁচতে পারে না। যেমন- Clostridium কতকগুলি সুবিধাবাদী অবায়বীয় (facultative anaerobes) অর্থাৎ অক্সিজেনের উপস্থিতিতেও বাঁচতে পারে। যেমন- E. Coli আবার কতকগুলি বাধ্যতামূলক বায়বীয় (obligate aerobes) অথাৎ অক্সিজেন ছাড়া বাঁচতে পারে না। যেমন- Bacteroides fragilis

[9] প্রকৃতিতে ব্যাকটেরিয়া -17°C সেলসিয়াস তাপমাত্রা থেকে শুরু করে ৪০°C তাপমাত্রা পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকতে পারে।

[10] ক্রোমোজোম না থাকায় ব্যাকটেরিয়ায় মাইটোসিস মিয়োসিস কোশবিভাজন ঘটে না।

[11] এদের বংশবৃদ্ধির প্রধান প্রক্রিয়া দ্বিভাজন (binary fission) |

[12] ফাজ ভাইরাসের প্রতি এরা খুবই সংবেদনশীল।

[13] এদের অধিকাংশই অজৈব লবণ জারিত করে শক্তি সংগ্রহ করে। 

[14] প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য ব্যাকটেরিয়া এন্ডোম্পোর (endospore) গঠন করে।

[15] ব্যাকটেরিয়া সাধারণত বেসিক রং (গ্রাম পজিটিভ বা গ্রাম নেগেটিভ) ধারণ করতে পারে।

ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিন্যাস (Classification of Bacteria)

বিভিন্ন বিজ্ঞানী ব্যাকটেরিয়াকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিন্যাস করেছেন। যে সকল বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে বিজ্ঞানীগণ ব্যাকটেরিয়াকে শ্রেণিবিন্যাস করেছেন তা হলো- কোশের আকৃতিগত পার্থক্য, জৈবিক প্রক্রিয়া, পুষ্টির ভিন্নতা, ফ্ল্যাজেলার বিভিন্নতা, রঞ্জক ধারণের ক্ষমতা ইত্যাদি।

আকৃতি অনুসারে ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিন্যাস

ব্যাকটেরিয়ার কোশের আকৃতি বিভিন্ন ধরনের, যথা-গোলাকার, দন্ডাকার, প্যাঁচানো, কমা চিহ্নের মতো, অণুসুত্রাকার, বহুরূপী ইত্যাদি।

[1] গোলাকার (Spherical) বা কক্কাস (Coccus): এককোশী গোল বা ডিম্বাকার, একক ব্যাকটেরিয়াকে কক্কাস বলে। সহাবস্থান অনুযায়ী এসব ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন ধরনের হয়।

[i] মাইক্রোকাস (Micrococcus): কক্কাস ব্যাকটেরিয়া যখন এককভাবে থাকে, তখন তাকে মাইক্রোকক্কাস বলে। উদাহরণ- (Micrococcus flavus)

[ii] ডিপ্লোকক্কাস (Diplococcus): এক্ষেত্রে গোলাকার ব্যাকটেরিয়ার সমূহ জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে। উদাহরণ- Diplococcus pneumoniae

[iii] স্ট্রেপটোকক্কাস (Streptococcus): এরা দেখতে গোলাকার এবং একটি সারিতে শৃঙ্খলাকারে থাকে।উদাহরণ- Streptococcus lactis

[iv] ছেঁট্টাকক্কাস (Tetracoccus): কক্কাই 2টি ভিন্নতলে বিভাজিত হয় এবং 4টি কোশের একেকটি গুচ্ছ গঠন করে। উদাহরণ-Gaffkya tetragena

[v] সারসিনা (Sarcina): কক্কাই ওটি ভিন্ন তলে বিভাজিত হয় এবং 4টি করে এক একটি কোশগুচ্ছ গঠন করে। উদাহরণ- Sarcina lutea

[vi] স্ট্যাফাইলোকক্কাস (Staphylococcus): এক্ষেত্রে কক্কাই ওটি ভিন্ন তলে অনিয়মিতভাবে বিভাজিত হয় এবং আঙ্গুরের থোকার মতো একেকটি গুচ্ছ গঠন করে। উদাহরণ- Staphylococcus aureus

[2] দণ্ডকার বা ব্যাসিলাস (Bacillus): এধরনের ব্যাকটেরিয়াগুলি দেখতে বেলনাকার বা দণ্ডাকার। একক কোশকে ব্যাসিলাস এবং একত্রে ব্যাসিলি (Bacilli) বলে।

[i] মনোব্যাসিলাস (Monobacillus): ব্যাসিলাস এককভাবে অবস্থান করে। উদাহরণ - Bacillus albus

[ii] ডিপ্লোব্যাসিলাস (Diplobacillus): দণ্ডাকার ব্যাকটেরিয়া বিভাজিত হয়ে দুটি পাশাপাশি সংলগ্ন থাকে। উদাহরণ- Moravella lacumata

[iii] স্ট্রেপটোব্যাসিলাস (Streptobacillus): ব্যাকটেরিয়া বিভাজিত হয়ে পাশাপাশি শৃঙ্খলাকারে অবস্থান করে। উদাহরণ- Bacillus tuberculosis

[iv] কক্কোব্যাসিলাস (Coccobacillus): ব্যাকটেরিয়া সামান্য লম্বা বা ডিম্বাকার হয়। উদাহরণ Salmonella, Mycobacterium

[3] সর্পিলাকার বা স্পাইরিলাম (Spirillum):  ধরনের ব্যাকটেরিয়া-দেহ সর্পিলাকার বা স্কুর মতো প্যাঁচানো হয়। উদাহরণ- Spirillum minus

[4] ভিব্রিও (Vibrio): এগুলো দেখতে কমা আকৃতির, অর্থাৎ দেহ খানিকটা পাক খাওয়া হয়। উদাহরণ- Vibrio cholerae

[5] হাইফা বা অণুসূত্রাকার (Hyphae-like): এগুলো পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট দীর্ঘ অণুসূত্র আকতির হয়। উদাহরণ- Streptomyces sp.

[6] বহুরূপী (Pleomorphic): পরিবেশগত অবস্থার কারণে কিছু ব্যাকটেরিয়া তাদের আকৃতির পরিবর্তন ঘটায়, এদেরকে বহুরূপী ব্যাকটেরিয়া বলে।

ফ্লাজেলার সংখ্যা অবস্থান অনুসারে ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিন্যাস:-

[1] অ্যামিকাস (Atrichous): এসব ব্যাকটেরিয়াতে কোন ফ্ল্যাজেলা থাকে না। উদাহরণ- Diptheria bacilli

[2] মলোটকাস (Monotrichous): এরূপ ব্যাকটেরিয়ার এক প্রান্তে বা এক পার্শ্বে মাত্র একটি ফ্ল্যাজেলা থাকে। উদাহরণ- Vibrio cholerae

[3] অ্যামফিট্রিকস (Amphitrichous): এই ব্যাকটেরিয়ার কোশের দুই প্রান্তে দুটি ফ্ল্যাজেলা থাকে। উদাহরণ- Spirilla serpentans

[4] সেফালোকাস (Cephalotrichous): এধরনের ব্যাকটেরিয়ার কোশের এক প্রান্তে একগুচ্ছ ফ্ল্যাজেলা থাকে। উদাহরণ - Pseudomonas fluorescens

[5] লফোট্রিকস (Lophorichous): এই ব্যাকটেরিয়ার কোশের দুই প্রান্তে দুইগুচ্ছ ফ্লাজেলা থাকে (থাইম্যান, 1950) উদাহরণ - Spirillum volutats

[6] পেরিট্রিকস (Peritrichous): এরূপ ব্যাকটেরিয়া কোশের চারপাশে বহু ফ্ল্যাজেলা থাকে। উদাহরণ- Bacillus typhosus

রঞ্জক ধারণের ক্ষমতা অনুসারে ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিন্যাস:-

ড্যানিশ চিকিৎসক হাল ক্রিশ্চিয়ান গ্রাম (Hans Christion Gram) 1884 খ্রিস্টাব্দে ব্যাকটেরিয়া কোশে রঞ্জিতকরণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তাঁর নাম অনুসারে এই রঞ্জিতকরণ পদ্ধতিকে গ্রাম রঞ্জণ (Grain stain) পদ্ধতি বলা হয়। পদ্ধতিতে প্রধান রঞ্জক হলো ক্রিস্টাল ভায়োলেট। রঞ্জকের উপর ভিত্তি করে ব্যাকটেরিয়া দুই ধরনের-

[1] গ্রাম পজিটিভ (Gram positive): এধরনের ব্যাকটেরিয়া ক্রিস্টাল ভায়োলেট রং ধারণ করে এবং স্পিরিট দিয়ে ধুয়ে দিলেও রং চলে যায় না। উদাহরণ- Bacillus subtilis

[2] গ্রাম নেগেটিভ (Gram Negative): এধরনের ব্যাকটেরিয়া ক্রিস্টাল ভায়োলেট রং ধারণ করে কিন্তু স্পিরিট দিয়ে ধুয়ে দিলে রং চলে যায়। উদাহরণ- Salmonella typhi

অক্সিজেনের নির্ভরশীলতা অনুসারে ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণিবিন্যাস:-

অক্সিজেনের নির্ভরশীলতা অনুসারে ব্যাকটেরিয়া প্রধানত দুপ্রকার-

[1] অ্যারোবিক (Aerobic): এরা বাতাসের মুক্ত অক্সিজেন ছাড়া বাঁচে না। উদাহরণ - Azotobacter beijerinckia

[2] অ্যানঅ্যারোবিক (Anaerobic): এরা বাতাসের মুক্ত অক্সিজেন ছাড়াই বাঁচে। উদাহরণ- Clostridium

ব্যাকটেরিয়া- সাধারণ গঠন (General Structure of Bacteria)

ব্যাকটেরিয়ার গঠন বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তাই, ব্যাকটেরিয়ার গঠন আলোচনা করতে হলে, একটি আদর্শ ব্যাকটেরিয়াম কোশের গঠন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়।

একটি আদর্শ ব্যাকটেরিয়াম কোশে সাধারণত যে সকল অংশগুলো থাকে তা হলো- [1] ফ্লাজেলা, [2] ক্যাপসিউল, [3] কোশপ্রাচীর, [4] প্লাজমামেমব্রেন, [5] মেসোসোম, [6] সাইটোপ্লাজম, [7] ক্রোমোসোম এবং [] প্লাজমিড।

[1] ফ্ল্যাজেলা (Flagella): ফ্ল্যাজেলা প্রোটোপ্লাজম দিয়ে গঠিত একপ্রকার সূত্রাকৃতির উপাঙ্গ যা কোশপ্রাচীর ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে আসে। ফ্ল্যাজেলিন নামক প্রোটিন দিয়ে ফ্ল্যাজেলা গঠিত। ফ্ল্যাজেলার সাহায্যে ব্যাকটেরিয়া তরল মাধ্যমে চলাফেরা করে। ফ্ল্যাজেলা অপেক্ষা খাটো শক্ত উপাঙ্গকে পিলি বলে। পিলি পিলিন নামক একপ্রকার প্রোটিন দিয়ে গঠিত। ব্যাকটেরিয়াকে কোনো কিছুর সাথে আটকে থাকতে পিলি সহায়তা করে।

[2] ক্যাপসিউল (Capsule): ক্যাপসিউল পলিস্যাকারাইড বা পলিপেপটাইড দিয়ে গঠিত একটি স্তর, যা ব্যাকটেরিয়া কোশের বাইরের দিকে থাকে। এটি কোশপ্রাচীরকে ঘিরে রাখে। একে স্লাইম স্তরও বলা হয়। এটি ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিকূল অবস্থা হতে রক্ষা করে।

[3] কোশপ্রাচীর (Cell wall): ক্যাপসিউলের নিচেই জড় কোশপ্রাচীর অবস্থিত। কোশপ্রাচীর পেপটিডোগ্লাইকান দিয়ে গঠিত। কোশপ্রাচীর সাধারণত 10-25µm পুরু হয়। এটি ব্যাকটেরিয়া কোশের নির্দিষ্ট আকার দৃঢ়তা দান করে। কোশপ্রাচীরে প্রায় 1µm ব্যাসের অনেকগুলো ছোট ছোট ছিদ্র থাকে। এই সকল ছিদ্রের মধ্য দিয়ে রাসায়নিক পদার্থসমূহ চলাচল করে।

[4] সাইটোপ্লাজমিক মেমব্রেন (Cytoplasmic membrame): কোশপ্রাচীরের ঠিক নিচে সাইটোপ্লাজমকে ঘিরে সাইটোপ্লাজমিক মেমব্রেন অবস্থান করে। এটি একটি সজীব ঝিল্লী। সাইটোপ্লাজমিক মেমব্রেন প্রোটিন লিপিড দিয়ে গঠিত। এর সাইটোপ্লাজমিক মেমব্রেন অনেক মেটাবোলিক কাজ করে।

[5] মেসোসোম (Mesosome): ব্যাকটেরিয়া কোশের সাইটোপ্লাজমিক মেমব্রেন অনেক সময় ভেতরের দিকে ভাঁজ হয়। একে মেসোসোম বলা হয়। এটি ব্যাকটিরিয়াল কোশবিভাজনে সহায়তা করে।

[6] সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm): সাইটোপ্লাজমিক মেমব্রেন দিয়ে পরিবেষ্টিত অবস্থায় সাইটোপ্লাজম থাকে। এটি সাধারণত বর্ণহীন। এতে কোশগহ্বর, চর্বি, শর্করা জাতীয় খাদ্য, প্রোটিন যার অধিকাংশই এনজাইম এবং বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ (যথা- ফসফরাস, লৌহ সালফার ইত্যাদি) বিদ্যমান থাকে। ব্যাকটেরিয়ার সাইটোপ্লাজমে কিছু পদার্থ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় দেখা যায়। যেমন-

[i] রাইবোসোম (705): প্রতিটি রাইবোসোম RNA প্রোটিন সহযোগে গঠিত। প্রোটিন সংশ্লেষণ করাই রাইবোসোমের প্রধান কাজ।

[ii] ক্রোম্যাটোফোরকতক ব্যাকটেরিয়াতে ক্রোম্যাটোফোর থাকে। এসব রঞ্জক পদার্থ ব্যাকটেরিয়ার সালোকসংশ্লেষণে সাহায্য করে।

[iii] কোশগহ্বরব্যাকটেরিয়ার সাইটোপ্লাজমে অত্যন্ত ছোট ছোট কোশগহ্বর থাকে।

[iv] ভলিউটিনতরুণ ব্যাকটেরিয়ার সাইটোপ্লাজমে এবং পুরাতন কোশের কোশগহ্বরে ভলিউটিন থাকে।

[7] ক্রোমোসোম (Cromosome): সাইটোপ্লাজমে শুধুমাত্র একটি ক্রোমোসোম থাকে। এটি প্রায় বৃত্তাকার DNA অণু। এটি নগ্ন কারণ এতে কোন হিস্টোন প্রোটিন থাকে না। তাছাড়া ক্রোমোসোমকে ঘিরে নিউক্লিয়ার আবরণীও থাকে না। DNA অণুসমৃদ্ধ অঞ্চলকে নিউক্লিয়ায়েড বলা হয়। এটি কোশের কেন্দ্রে অবস্থান করে।

[] প্লাজমিড (Plasmid): কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়াতে (যেমন- E. coli) নিউক্লিওয়েড ছাড়াও অতিরিক্ত ছোট প্রকৃতির বৃত্তাকার DNA থাকে যাকে প্লাজমিড বলে। প্লাজমিডযুক্ত ব্যাকটেরিয়া জিন প্রকৌশলে বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

ব্যাকটেরিয়া- জনন (Reproduction of Bacteria)

ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি অতি দ্রুত সম্পন্ন হয়। দুটি পদ্ধতিতে জনন ক্রিয়া ঘটে-[1] অযৌন [2] যৌন।

অযৌন জনন (Asexual Reproduction)

গ্যামেট উৎপাদন এদের মিলন ছাড়াই যে জনন ঘটে তাকে অযৌন জনন বলে। ধরনের জনন পদ্ধতিতে একটিমাত্র মাতৃদেহ থেকেই নতুন জীবের সৃষ্টি হয়। ব্যাকটেরিয়াতে নানা ধরনের অযৌন জনন সম্পন্ন হলেও দ্বিভাজন পদ্ধতিই এর সংখ্যাবৃদ্ধির প্রধান উপায়। বিভিন্ন ধরনের অযৌন জনন পদ্ধতিগুলি হলো-

[1] দ্বিভাজন (Binary fission):  ধরনের জননের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার কোশদেহটি সরাসরি (ক্রমাগত ধীর প্রক্রিয়ায়) বিভাজিত হয়ে হুবুহু একই রকমের দুটি অপত্য কোশে পরিণত হয়। প্রতিটি অপত্য কোশ পরিণত হয়ে পুনরায় একই ভাবে বিভাজিত হয়ে অসংখ্য অপত্য কোশের সৃষ্টি করে। এভাবে ক্রমাগত বিভাজন পদ্ধতির দ্বারা স্বল্প সময় ব্যাকটেরিয়া কোশের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

[i] প্রক্রিয়ার শুরুতে ব্যাকটেরিয়াল DNA, ব্যাকটেরিয়া কোশের দুই প্রান্তের মাঝামাঝি অবস্থান নেয় এবং কোশঝিল্লি (কখনও কখনও একটি মেসোজোম)-এর সাথে যুক্ত হয়।

[ii] কোশঝিল্লির সাথে যুক্ত অবস্থায় DNA অণুর প্রতিলিপন বা রেপ্লিকেশন ঘটে, ফলে দুটি অপত্য DNA অণু সৃষ্টি হয়।

[iii] কোশটির দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং কোশের দুই প্রান্তের মাঝখানে নতুন কোশপ্রাচীর কোশঝিল্লির বৃদ্ধি সংঘটিত হয়।

[iv] কোশপ্রাচীর কোশঝিল্লি লম্বায় বৃদ্ধির কারণে অপত্য DNA অণুদুটি দুই দিকে পৃথক হয়ে যায়।

[v] দুই DNA অণুর মাঝখানে বৃদ্ধিরত কোশপ্রাচীর কোশঝিল্লি ক্রমশ ভেতরের দিকে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ভেতরে প্রবেশ করে ছেদপ্রাচীর (septum) নির্মাণ করে।

[vi] কোশের সাইটোপ্লাজম ধীরে ধীরে দুভাগে বিভক্ত হয়ে এবং গোলাকার DNA-তন্ত্রী (নিউক্লিওয়েড) পরিবেষ্টিত হয়ে দুটি পৃথক অপত্য কোশে পরিণত হয়।

[vii] নতুন সৃষ্ট অপত্য কোশদুটি পরস্পর হতে পৃথক হয়ে যায় এবং অনুকূল পরিবেশে বৃদ্ধি পেয়ে মাতৃকোশের সমান আকার ধারণ করে। পাশাপাশি পুনরায় দ্বিভাজন অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেয়।

[2] মুকুলোদগম (Budding): এই প্রক্রিয়ায় মাতৃকোশের একাংশ বিবর্ধিত হয়ে মুকুল (bud) গঠন করে এবং দেহের DNA-টি দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে একটি অংশ (DNA) মুকুলের মধ্যে প্রবেশ করে। এই মুকুলটি ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং পরিণত মুকুল মাতৃকোষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অপত্য ব্যাকটেরিয়ার দেহ গঠন করে। উদাহরণ- Ancalomicrobium adetum

[3] খন্ডায়ন (Fragmentation):  প্রক্রিয়া সূত্রাকার ব্যাকটেরিয়া (যেমন- স্ট্রেপটোমাইসিস) প্রজাতিতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে সূত্রাকার ব্যাকটেরিয়ার দেহ বিভাজনের মাধ্যমে বহুখণ্ডে বিভক্ত হয়ে অসংখ্য দণ্ডাকার ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করে।

[4] কনিডিয়া (Conidia): সূত্রাকার স্ট্রেপটোমাইসিস [ ব্যাকটেরিয়া স্পোরের মতো কতকগুলি শৃঙ্খলাবদ্ধ কনিডিয়া বা কনিডিওস্পোর গঠন করে বংশ বৃদ্ধি করে। কনিডিয়া দ্বিভাজন প্রক্রিয়ায় অল্প সময়ে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়। সূত্রাকার ব্যাকটেরিয়ার সচল কনিডিয়াকে গোনিডিয়া (Gonidia) বলে।

[5] গনিডিয়া (Gonidia): কতগুলো ব্যাকটেরিয়ার প্রোটোপ্লাজম খণ্ডিত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফ্ল্যাজেলাযুক্ত গনিডিয়া বা গনিডিওস্পোর উৎপন্ন করে। মাতৃ-কোশপ্রাচীর বিদীর্ণ হয়ে গনিডিয়াগুলো বাইরে বেরিয়ে এসে অপত্য ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করে। Leucothris- জাতীয় সূত্রাকার ব্যাকটেরিয়া এভাবে সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটায়।

[6] এন্ডোস্পোর (Endospore): প্রতিকূল পরিবেশে উপযুক্ত খাদ্যের অভাব ঘটলে ব্যাকটেরিয়া অন্তরেণু বা এন্ডোস্পোর সৃষ্টি করে বংশের বিস্তার ঘটায়। সময় ব্যাকটেরিয়া কোশের প্রোটোপ্লাস্ট সংকুচিত হয়ে গোল বা ডিম্বাকার ধারণ করে। এর চারদিকে একটি পুরু আবরণ তৈরি হলে তাকে এন্ডোস্পোর বলে।

এন্ডোস্পোরের সাহায্যে ব্যাকটেরিয়াম কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি হয় না। তাই একে বংশবৃদ্ধির উপায় হিসেবে বিবেচনা না করে বরং প্রতিকূলতা প্রতিরোধের কৌশল হিসেবে রেস্টিং স্পোর (Resting spore) নামে অবকাশকালীন স্পোর হিসেবে গণ্য করা হয়। সাধারণত Bacillaceae গোত্রের ব্যাকটেরিয়া এন্ডোস্পোর উৎপন্ন করে।

ব্যাকটেরিয়ার গঠন
ব্যাকটেরিয়ার গঠন

যৌন জনন (Sexual Reproduction)

ব্যাকটেরিয়ার যৌন জননের ক্ষেত্রে কোনো গ্যামেটের সষ্টি হয় না, দুটি ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে শুধু জিনগত পদার্থের বিনিময় ঘটে। তাই প্রক্রিয়াকে জিনগত পুনর্বিন্যাস বা জেনেটিক রিকম্বিনেশন (Genetic recombination) বলে। 1946 খ্রিস্টাব্দে E. coli নিয়ে গবেষণাকালে ব্যাকটেরিয়ার যৌন জননের ঘটনা আবিষ্কৃত হয়।

ব্যাকটেরিয়ার যৌন জনন তিনটি প্রক্রিয়ায় সংগঠিত হয়-

[1] সংযুক্তি বা কনজুগেশন (Conjugation): এক্ষেত্রে দুটি ব্যাকটেরিয়া থেকে (F+ pilus) থেকে অপরটিতে (F-pilus) প্রবেশ করে। যেমন- স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি।

[2] রূপান্তরভবন বা ট্রান্সফরমেশন (Transformation): এক্ষেত্রে পরিবেশের নগ্ন DNA ব্যাকটেরিয়া কোশে প্রবেশ করে DNA তে আবদ্ধ হয়। যেমন- এশ্চেরেশিয়া কোলাই।

[3] ট্রান্সডাকশন (Tranduction): এক্ষেত্রে ফাজ ভাইরাস একটি ব্যাকটেরিয়ার DNA অপর ব্যাকটেরিয়ায় স্থানান্তরিত করে। যেমন- কলিফাজ ল্যামডা ফাজ দ্বারা DNA স্থানান্তরিত হয়।

ব্যাকটেরিয়ার যৌন জনন প্রকৃত যৌন জনন নয়। আধুনিক বিজ্ঞানীরা ধরনের মিলনকে ব্যাকটেরিয়ার চারিত্রিক গুণাবলির বিনিময় পুনর্বিন্যাস নামে আখ্যায়িত করেন।

আরও জানুন:

1. ছত্রাক (Fungus) - সংজ্ঞা, বসতি, বৈশিষ্ট্য, দৈহিক গঠন, জনন, প্রাণী ও উদ্ভিদ দেহে রোগ সৃষ্টিকারী ছত্রাক সমূহ।


■ More Posts from -
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url