পৃথিবীতে অসম জনসংখ্যা বন্টনের তারতম্যের কারণ
২০১৩ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের গণনা অনুযায়ী পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যা ছিল ৭১৬ কোটি কিন্তু বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৭৫০ কোটিতে। তবে এই জনসংখ্যা সর্বত্র সমানভাবে বন্টিত নয়, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০% বাস করে স্থলভাগের মাত্র ১০% স্থানে এবং ১০% মানুষ ছড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীর 90% স্থলভাগে। নিম্নে অসম জনসংখ্যা বন্টনের তারতম্যের কারণ বর্ণনা করা হলো -
প্রাকৃতিক কারণ
1. অক্ষাংশগত অবস্থান
নিম্ন থেকে উচ্চ অক্ষাংশ পর্যন্ত জলবায়ুর তারতম্যের কারণে জনসংখ্যার তারতম্য দেখা যায়।
উদাহরণ : নিম্ন ও উচ্চ অক্ষাংশ তুলনায় নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে লোকসংখ্যা বেশি।
2. ভূপ্রকৃতি
উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে বা মালভূমি অঞ্চলে বন্ধুর ভূপ্রকৃতির জন্য জনসংখ্যা স্বল্প কিন্তু সমভূমিতে জীবিকা ও কাঠামোর অনুকূল হওয়ায় লোক সংখ্যা বেশি হয়।
উদাহরণ : গাঙ্গেয় সমভূমিতে লোক সংখ্যা বেশি।
3. জলবায়ু
অতি শীতল, উষ্ণ আদ্র, উষ্ণ মরু জলবায়ুতে মানুষের বসবাসের প্রতিকূল হওয়ায় জনঘনত্ব খুব কম কিন্তু অনুকূল নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে মানুষের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকায় জনসংখ্যা বেশি হয়।
উদাহরণ : ভারতের থর বা আফ্রিকার আমাজন অঞ্চলে জলবায়ুর প্রতিকূলতার জন্য লোক সংখ্যা স্বল্প।
4. শিলা ও মাটি
শিলা ও মাটির প্রকৃতি, ভৌম জলের প্রাপ্যতা, কৃষির সাফল্য, বসতির অবস্থান ইত্যাদি বিষয়গুলির তারতম্যের জন্য জনসংখ্যার তারতম্য ঘটে।
5. জলের প্রাপ্যতা
জলের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে কৃষি, পশুপালন, মৎস্য ক্ষেত্র ইত্যাদি জীবিকার সুযোগ ঘটে যা জন বন্টনের প্রধান নিয়ন্ত্রক।
6. উদ্ভিদ
বনভূমির উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে আবার জনঘনত্বের তারতম্য ঘটে।
উদাহরণ : কঙ্গ বা আমাজন অববাহিকার ঘন অরণ্যের ফলে অতিরিক্ত জনসংখ্যা আবার মরুভূমিতে বনভূমি না থাকায় অতি বিরল জনসংখ্যা দেখা যায়।
7. খনিজ সম্পদের প্রাপ্তি
খনিজ সম্পদের বন্টন জনসংখ্যার বন্টনকে নিয়ন্ত্রণ করে।
উদাহরণ : ভারতে অরণ্যে ঢাকা বন্ধুর মালভূমি অঞ্চল ছোট নাগপুরে খনিজকে কেন্দ্র করে লোক বসতি গড়ে উঠেছে।
অর্থনৈতিক কারণ
কোন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, সেগুলি আবার জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
উদাহরণ : উত্তর-পশ্চিম ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল কৃষি শিল্প বাণিজ্যে উন্নতি হওয়ায় লোক বসতি বেশি হয়।
সামাজিক কারণ
1. ধর্মীয় প্রভাব
ধর্মীয় বিভিন্ন ছোট বড় শহরকে কেন্দ্র করে জনঘণত্ব বেশি দেখা যায়।
উদাহরণ : আরবের মক্কা, ভারতের হরিদ্বার, বারানসের পুর ী প্রভৃতি ধর্মীয় অঞ্চলে জনসংখ্যার প্রভাব বেশি।
2. সাংস্কৃতিক প্রভাব
মানুষের শিক্ষা দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, উন্নত কারিগরি ও প্রযুক্তবিদ্যার উপর নির্ভর করে জনঘনত্বের তারতম্য ঘটে।
উদাহরণ : ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশ গুলিতে brain gain জন্য জনসংখ্যার প্রাধান্য দেখা যায়।
রাজনৈতিক কারণ
রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে জনসংখ্যা বন্টনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
উদাহরণ : ১৯৪৭ সালে ভারতভাগের সময় সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জনসংখ্যার আধিক্য ঘটে ও সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে ইউরোপের দেশ গুলিতে জনসংখ্যার কেন্দ্রীভবন ঘটে।