ওজন গহ্বর কাকে বলে? ওজোন স্তর ধ্বংসের কারণ ও প্রভাব লেখো
ওজন গহ্বর কাকে বলে? ওজোন স্তর বিনাশ বা ধ্বংসের কারণ ও প্রভাব লেখো
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে জর্ডন ডাকসন প্রথম ওজোন স্তরের ক্ষয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন। এরপর ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে জে সি ফারম্যান এর নেতৃত্বে আন্টার্কটিক বিজ্ঞানী ওজন গহ্বরের সন্ধান পায়। তারা বলেন প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত আন্টাকর্টিক মহাদেশের ওপর থেকে ওজোন স্তর পাতলা হচ্ছে। প্রতি বছর বসন্তকালীন ওজোন স্তরের ক্ষয়কে ওজন গহ্বর বলে।
ওজোন স্তর ধ্বংসের কারণ
ওজন স্তর ধ্বংস বা বিনাশের দুটি কারণ ধরা হয়ে থাকে -
1. প্রাকৃতিক কারণ
2. মনুষ্য সৃষ্ট কারণ
A. প্রাকৃতিক কারণ
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে প্রাকৃতিক উপায়ে যেমন ওজোন গ্যাস গুলি উৎপন্ন হয় তেমনি ওই স্তরে আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ওজোন স্তরের বিনাশ ঘটে, ওজোন গ্যাসের গঠন ও বিনাশ এই স্তরের ভারসাম্য রক্ষায় সমর্থ হয়।
ওজোন স্তরে অতিবেগুনি রশ্মির উপস্থিতিতে ওজোন গ্যাসের বিনাশ ঘটে -
O3 + অতিবেগুনি রশ্মি --> 02 + O
O3 + O --> 2O2 বা O2+O2
B. মনুষ্য সৃষ্ট কারণ
মানুষের ক্রিয়া-কলাপ এর জন্য ওজোন স্তর বিনাশ হতে থাকে।
1. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে চালিত বিমান থেকে নির্গত জলীয় বাষ্প ও নাইট্রোজেন অক্সাইড গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে ওজোন কে বিনাশ করে।
2. পারমাণবিক বিস্ফোরণের জন্য বাতাসে NO2 বৃদ্ধির ফলে ওজোন অনুর বিনাশ ঘটে।
3. শিল্পাঞ্চল গুলিতে কারখানা থেকে নির্গত ভাসমান সালফেট এরোসল ওজোন অনুকে বিয়োজিত করে অক্সিজেন অনু ও পরমাণুতে রূপান্তর ঘটায় ফলে ওজোন স্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
4. ক্লোরো-ফ্লুরো কার্বন ও ক্লোরো-ফ্লুরো মিথেন প্রধান ওজন ধ্বংসকারী গ্যাস। একটি CFC এক লক্ষের বেশি ওজন কণাকে ধ্বংস করতে পারে। এয়ারকন্ডিশনার, স্প্রে মেশিন প্রভৃতি থেকে নির্গত গ্যাস ওজোন স্তরকে ধ্বংস করে।
ওজোন স্তর ধ্বংসের ক্ষতিকর প্রভাব
A. মানুষের ওপর প্রভাব
1. মানুষের ত্বকের অনাবৃত অংশে প্রতিবেগুনি রশ্মির UV-B তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 2900 - 3200 A পর্যন্ত দগ্ধ হয় একে সৌরদগ্ধ বলে। এর ফলে ত্বক তামাটে বর্ণের হয়। 2. চোখের লেন্স ও কর্নিয়া দ্বারা অতি বেগুনি রশ্মি শোষণের ফলে অল্প বয়স্ক মানুষের চোখের ছানি পড়ছে। 3. উঠে বেগুনি রশ্মির ফলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, ফলে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। 4. অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে স্তন ক্যান্সারে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। 5. প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং বন্ধ্যাত্ব বৃদ্ধি পায়।
B. অন্যান্য প্রাণীদের ওপর প্রভাব
1. অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে বাস্তুতন্ত্রের মূল ভিত্তি উদ্ভিদ প্ল্যাঙ্কটন এর পরিমাণ হ্রাস পায়।
2. অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে নিম্ন শ্রেণীর প্রাণীর বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার ব্যাহত হয়।
3. যে পরিবেশে UV-B এর অবাধ অনুপ্রবেশের ফলে উভচর প্রাণী সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।
C. উদ্ভিদের ওপর প্রভাব
1. UV-B এর প্রভাবে গাছের 20 থেকে 50 শতাংশ পাতায় ক্লোরোফিলের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে।
2. অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে পত্ররন্ধ দ্বারা মৃত্তিকা স্তরের জল দ্রুত হারে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে হ্রাস পাচ্ছে।
3. অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে গাছের পাতা ফুল ফল ও বীজের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
D. জলবায়ুর উপর প্রভাব
ওজোন হ্রাসের ফলে আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান যেমন উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, হিমবাহের দিক ও গতির পরিবর্তন ঘটে।
E. বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব
ওজন হ্রাস নিয়ন্ত্রণ না করলে বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা স্থায়িত্ব ও ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে। জীব পরিবেশ পরিবর্তিত হলে জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষ ও শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটবে।