অলিম্পিকের ইতিহাস সম্পর্কে যা জানো লেখো?
প্রাচীন অলিম্পিক গেমস এর উদ্ভব সম্পর্কে নানা জনশ্রুতি আছে তবে ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায় -
প্রাচীন গ্রিস দেশে হেলার্স নগর রাষ্ট্র গুলির মধ্যে প্রায় যুদ্ধ লেগে থাকত যার ফল স্বরূপ সামাজিক জীবন নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছিল। তখন ডেলাফির নামে এক সন্ন্যাসীর যুদ্ধ বন্ধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াসের দেশব্যাপী এক বিশাল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সাময়িক এক প্রকার হিংসা দেশ ভুলে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে দেশবাসী এক বিশাল ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন।
স্থান ও কাল
প্রাচীন অলিম্পিক গেম যতটা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা মূলক ঠিক ততটা গ্রিসের ধর্মীয় উৎসব। খেলার মাঝে একদিন জিউসের কাছে 100 টি ষাড়ের বলি দেওয়া হতো কেউ আবার ষাড়ের বদলে ভেড়া বা শুকর বলির কথা বলে।
নিয়ম কানুন
1. জন্মসূত্রে গ্রিক হতে হবে।
2. কোন অপরাধি এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
3. এই প্রতিযোগিতায় নারীদের অংশগ্রহণ ও ক্রীড়াঙ্গনে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।
4. প্রতিযোগিতার পূর্বে নিজের রাজ্যে 10 মাসের অনুশীলন করতে হবে।
5. প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতায় একমাস আগে থেকে অলিম্পিয়ায় থাকতে হবে।
বিষয় সমূহ ও অনুষ্ঠান সূচি
খ্রিস্টপূর্ব 776 অব্দে প্রথম অলিম্পিক সোজা পথে দৌড় (792.28m) প্রতিযোগিতাটির ঐতিহাসিক প্রমান দেওয়া যায় প্রথম থেকে 13 তম অলিম্পিক গেমস পর্যন্ত যেটি ছিল প্রতিযোগিতার একমাত্র বিষয়। পরবর্তীকালে মুষ্টি যুদ্ধ , খোর দৌড়, রথ দৌড় প্রভৃতি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অন্তর্ভুক্ত হয়। খ্রিস্টপূর্ব 820 অব্দে দুদিনের প্রতিযোগিতায় অনুষ্ঠান সূচি হল -
প্রথম দিন - ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও শপথ গ্রহণ।
দ্বিতীয় দিন - রথ দৌড়, পেন্ট সলন ।
তৃতীয় দিন - মূলত পূর্ণিমা তিথিতে জিউসের উদ্দেশ্যে বলিদান ও বিকেল বেলায় বালক, ঘোষক ও বাদকদের প্রতিযোগিতায় ধর্মীয় সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
চতুর্থ দিন - প্রতিযোগিতার মূল বিষয় সমূহ।
পঞ্চম দিন - পুরস্কার বিতরণ ও আনন্দ উৎসব।
পুরস্কার
প্রাচীন অলিম্পিক গেমসের ষষ্ঠতম অনুষ্ঠান পর্যন্ত বিজয়ীদের উপহার দেওয়া হতো শস্য দানা, গৃহপালিত পশু, ধাতু নির্মিত পাত্র। পরবর্তী কালে এটি পরিবর্তিত হয়ে বিজয়ীদের পবিত্র অলিভ পাতার মালা বা মুকুট পরিয়ে সম্মান জানানো হতো যা ছিল ধর্মীয় সম্পদ। যে গাছ থেকে পাতা নেওয়া হতো তার নাম হলো ক্যালিস স্টিফেয়ান।
অবসান
গ্রিসে হাজার বছরের বেশি ধরে চলা (1200 বছর) অলিম্পিক রোমান শাসকদের রোশানলে পড়ে গেল। পরাধীন গ্রিসের কাছে রোমানরা কোন দিন জিততে পারেনি। শুরু হল অসৎ উপায় অবলম্বন ও স্বেচ্ছাচার। অলিম্পিক তার গৌরব হারিয়ে ফেলল। অবশেষে শুধুমাত্র খ্রিস্ট ধর্মকে রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে প্রতিপন্ন করার অজুহাতে 394 খ্রিস্ট তৎকালীন রোমান সম্রাট থিওরোসিয়াম অলিম্পিক ক্রিয়া বন্ধের ফরমান জারি করে। এরপর অলিম্পিয়ার ক্রিয়া ভূমি বহূকাল পতিত অবস্থায় পড়েছিল। ষষ্ঠ শতাব্দীতে তা ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায়।