সত্যবতী সুত ব্যাস বিখ্যাত জগতে - মন্তব্যটির পৌরাণিক প্রসঙ্গ উল্লেখ কর? কাব্য অংশটির প্রসঙ্গের কারণ উল্লেখ কর ?
উত্তর:
আলোচ্য অংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত নীলধ্বজের প্রতি জনা শীর্ষক পত্রকাব্য থেকে নেওয়া হয়েছে। এই মন্তব্যটি সদ্য সন্তান হারানো মায়ের কন্ঠে আলোচনা উক্তিটি ধ্বনিত হয়েছে।
ধীবর পালিতা সত্যবতী যৌবনে যমুনা পারাপারের কাজ করতেন। সত্যবতীর শরীরে প্রবল মাছের গন্ধ পাওয়া যেত তাই তার আর এক নাম মৎস্যগন্ধ। কোন এক সময় তীর্থ পর্যটনের সময় পরাশর মুনি তার নৌকায় ওঠেন এবং মৎস্যগন্ধার প্রতি আকৃষ্ট হন ও তার গর্ভে নিজের সন্তান প্রার্থনা করেন । ফলে পরাসর মুনি কৃত্রিমভাবে কুয়াশা সৃষ্টি করে নদীর ওপর সত্যবতীর সঙ্গে মিলিত হন। এরই পরিবর্তে মৎস্যগন্ধার গর্ভে কৃষ্ণ দ্বৈপান ব্যাসের জন্ম হয়। পুরানে এই ব্যাসকে কৃষ্ণের অংশ হিসেবে তুলনা করা হয়েছে। শুধু মহাভারতের রচনাকার হিসেবে ব্যাসদেব জগতে খ্যাত ছিল না। তিনি বেদের বিভাগ করেন এবং বেদান্ত দর্শন রচনা করেন।
নীলধ্বজের প্রতি জনা কাব্যাংশে জনার প্রধান লক্ষ্য ছিল পুত্র হত্যা পার্থের সঙ্গে রাজা নীলধ্বজের যে সক্ষা, তা নিয়ে নিজের ক্ষোভ ও বেদনাকে প্রকাশ করা আর তা করতে গিয়েই পার্থের বীরত্ব শুধু নয়, তার জন্ম ইতিহাস কেও জনা আক্রমণ করেন।
"ভোজবালা কুন্তী—কে না জানে, তারে,
স্বৈরিণী তনয় তার জারজ অর্জ্জুনে"
কুন্তি কে কূলটা বা নষ্টা রমণী বলে অভিহিত করেন। মহাভারতের পাণ্ডব কীর্তনের জন্য ব্যাসদেব কেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি। ব্যাসদেবের জন্মের পর সত্যবতীর সঙ্গে বিবাহ হয় ভিষ্মের পিতা শান্তনুর। বিবাহের পর তাদের চিত্রাঙ্গনা ও বিচিত্রবীর নামে দুই পুত্র সন্তান হয় । এরপর কাশি রাজ্যের কন্যা অম্বিকা - অম্বালিকার সঙ্গে দুই পুত্র সন্তানের বিবাহ হয়। সাত বছর পর রাজা বিচিত্রবীরের যক্ষা রোগে মৃত্যু হলে মাতা সত্যবতীর অনুরোধে পরলোকগত ভাই বিচিত্রবীরের দুই বিধবা স্ত্রী অম্বিকা ও অম্বালিকার গর্ভে যথাক্রমে ধীতরাষ্ট্র ও পান্ডুর জন্ম দেন ব্যাসদেব। তাই জনার চোখে ব্যাস হলেন কূ-কূলের কুলাচার্য । তাই মহাভারতে বর্ণিত ব্যাসদেবের বক্তব্যকে শিরোধার্য বা সত্য বলে মেনে নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই বলে জনা মনে করেন তাই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।
" করিলা কামকেলি লয়ে কোলে ভ্রাতৃবধূদ্বয়ে
ধর্ম্মমতি"
নিলধ্বজের প্রতি জনা - মাইকেল মধুসূদন দত্ত অন্যান্য প্রশ্নোত্তর