শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য বলতে কী বোঝো? এই লক্ষ্যে সুবিধা ও অসুবিধা গুলি উল্লেখ করো ।

Q. শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক মতবাদ সম্পর্কে আলোচনা করো এবং এই শিক্ষার সুফল ও কুফল উল্লেখ করো।

 ভূমিকা :

 শিক্ষা হলো ব্যক্তির জীবন বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যার দ্বারা ব্যক্তির প্রয়োজন মতো আচরণের পরিবর্তন ঘটিয়ে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলে । বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন শিক্ষাবিদগণ শিক্ষার নির্ধারণের থেকে ব্যক্তিকে প্রাধান্য দিয়েছেন অর্থাৎ ব্যক্তির উপর গুরুত্ব আরোপ করতে গিয়ে শিক্ষার লক্ষ্য হয়েছে ব্যক্তিতান্ত্রিক।

শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য

 ব্যক্তিকে ভিত্তি করে যে শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ হয় তাকে ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষা বলে। অর্থাৎ শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো ব্যক্তির উন্নয়ন এবং এই ব্যক্তির সমষ্টি হল সমাজ সুতরাং ব্যক্তি তার চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষা অর্জন করে তাকে শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্য বলে।

ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষার সুবিধা :

ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষার সংজ্ঞা থেকে যে সুবিধাগুলি বা ফলগুনি প্রতীয়মান হয় সেগুলি নিম্নোক্ত তুলে ধরা হলো

১. সমাজকল্যাণ
 শিক্ষার কাজ হবে ব্যক্তির সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের মাধ্যমে সমাজের কল্যাণ সাধন করা কারণ ব্যক্তির কল্যাণ এর মধ্যে সমাজের কল্যাণ নিহিত হয়েছে।

2. ব্যক্তি সত্তার বিকাশ 
ব্যক্তিতান্ত্রিক মতবাদে বিশ্বাসী চিন্তাবিদ মনে করেন বিবর্তনবাদের উপর ভিত্তি করে মানুষের ব্যক্তিসত্তার বিকাশ সাধিত হয় ফলে ব্যক্তি সমাজের নতুন চিন্তা ও নতুন কর্মের উদ্ভব হয়।

3. স্বাধীনতার বিকাশ
ব্যক্তি তান্ত্রিক শিক্ষার অন্যতম শিক্ষা হলো স্বাধীনতার বিকাশ। এজন্য সহজাত ক্ষমতা সুষ্ঠু বিকাশের সাধনের জন্য স্বাধীনতা প্রদান করা একান্তই কাম্য।

4. পরিপূর্ণ বিকাশ
 ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষার প্রধান সমর্থন হলেন শিক্ষাবিদ নান। তিনি তার 'এডুকেশন ইন ডাটা এন্ড ফাস্ট প্রিন্সিপাল' গ্রন্থের ব্যাক্তি স্বাধীনতার বিকাশ ও শিক্ষার ধারা সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। তার মতে শিক্ষার প্রধান কাজ হবে ব্যক্তির সকল সম্ভাবনা সুমত্তার পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশ রচনা করা।

ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষার অসুবিধা

ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষার লক্ষ্যে সুবিধাগুলি আলোচনার পর এই শিক্ষার যে সকল ত্রুটি বা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো

1. নিয়ন্ত্রণের অভাব 
  ব্যক্তির বিকাশের জন্য স্বাধীনতা যেমন প্রয়োজন রয়েছে তেমনই নিয়ন্ত্রণেরও প্রয়োজন রয়েছে কারণ নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ব্যক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়।

2. সমাজ নিরপেক্ষ
 ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষার ব্যক্তিসত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে সমাজ নিরপেক্ষ শিক্ষার কথা চিন্তা করে কিন্তু সামাজিক সত্তা কে বাদ দিয়ে ব্যক্তিসত্তাকে কখনোই ভাবা যায় না।

3. আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর 
ব্যক্তি তান্ত্রিক শিক্ষার অপর একটি বাধা প্রতিকূলতা হলো এই শিক্ষা ব্যক্তিকে বহু ক্ষেত্রেই স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রিক করে তোলে।

উপসংহার
সবার উপরে উল্লেখিত ব্যক্তিতান্ত্রিক শিক্ষার সংজ্ঞা এবং সুফল ও কুফল গুলি আলোচনার পর সর্বশেষ একথা বলা বাহুল্য যে ব্যক্তির নিজস্ব সত্তার বিকাশ হলো শিক্ষার ব্যক্তিতান্ত্রিক লক্ষ্যের মূল কথা।।

    আরো অন্যান্য প্রশ্নগুলি

Post a Comment

এই তথ্যের ব্যাপারে আরো কিছু জানা থাকলে বা অন্য কোনো প্রশ্ন থাকলে এখানে লিখতে পারেন ।