স্বামী বিবেকানন্দ রচিত সুয়েজ খালে হাঙ্গর শিকার প্রবন্ধে যাদের বলতে ভারতবর্ষের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষদের কথা বলা হয়েছে।
ভারত বর্ষ কৃষিপ্রধান দেশ তার উর্বর মাটিতে অকৃপণভাবে ফলেছে কৃষিজ ফসল, সেদিন তার দান পৌঁছে গিয়েছিল নানা প্রান্তে। ভারতবর্ষের সুতির কাপড়, তুলো পাঠ, রেশম, পশম থেকে শুরু করে লবঙ্গ, এলাচ প্রভৃতি ফসলে সমৃদ্ধ হয়েছে পৃথিবীর বহু দেশ। ভারতবর্ষ ছিল সেদিন অন্যান্য দেশের সহায় ও আশ্রয়। কিন্তু আজ ভারতবর্ষ তাদের জায়গায় সমাসিন নয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কৃষিজ সম্পদ উৎপাদনে ও গুনমানে অনেক এগিয়ে।
কিন্তু কেনো ? তার উত্তরে বলা যায় ভারতবর্ষ সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা হয়ে উঠেছিল তার মূলে কাদের অবদান ছিল? কাদের নিরলস পরিশ্রমের ফলে সমাজের অগ্রগতির চাকা সচল ছিল? সবকিছুর মূলে ছিল সমাজের সাধারণ মানুষ লেখক এর ভাষায় "বিজাতি বিজিত সজাতি নিন্দিত ছোট জাত", তারা কি কোনদিন সমাজে মর্যাদা পেয়েছে? বরং তারা চিরদিনই অবহেলিত, উপেক্ষিত। অথচ এদের শ্রমে কোনদিন ভাটা পড়েনি। শ্রমজীবী মানুষের কর্মধারা প্রবাহিত থেকেছে সৃষ্টির আদিকাল থেকে।
রবীন্দ্রনাথও বলেছেন -
শত শত সাম্রাজ্যর ভগ্নাশেষ পরে
ওরা কাজ করে।
দেশের মানুষের চোখে আঙ্গুল দিয়ে লেখক তা দেখিয়ে দিয়েছেন। স্বামীজি বলেছেন 'তোমাদের পিতৃপুরুষ দুখানা দর্শন লিখেছেন, দশখানা কাব্য বানিয়েছেন, দশটা মন্দির করেছেন - তোমাদের ডাকের চোটে গগন ফাটছে।' কথাটা সম্পূর্ণ সত্যি। চিরকাল শিক্ষিত ধার্মিক কিন্তু কীর্তিমানদের সম্মান প্রদর্শন করা হয়। কখনো সমাজের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষদের মর্যাদা দেওয়া হয় না। তাই লেখক চির পদ দলিত শ্রমজীবী মানুষদের প্রণাম জানিয়ে সবার জ্ঞানচক্ষু খুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।