তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের গল্পকার যে আধুনিক মধ্যবিত্তের মানসিকতার সংকটের ছবি এঁকেছেন তা আলোচনা করো।
এখানে কবি তেলেনাপোতা বলতে কি বুঝিয়েছেন ?
"Premendra is a broken hearted dreamer Still hoping for the best from a revolution"
কবি প্রেমেন্দ্র মিত্রের মত গল্পকারও জীবনকে দেখেছেন ভাঙ্গা বন্দর , ভাঙ্গা জাহাজ এবং ছেঁড়া পাল এর চিত্রকল্পে নিম্ন মধ্যবিত্ত জীবনে নিরুপায় ব্যর্থতা আর দারিদ্র্যের আঘাতে নৈতিক মেরুদন্ড কেমন করে ভেঙে চুরমার হয়ে যায় মনোজগতের সেই কঠিন সংকটের ছবি প্রেমেন্দ্র এর গল্পে এক সংহৃত রূপ লাভ করেছে। এই বিষয়ে তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পটি উল্লেখযোগ্য যে জটিলতা complex, যে রুগ্নতা বা morbidity আঁকড়ে ধরেছে সমাজকে তারই চিত্র দিয়ে নতুনভাবে তেলেনাপোতা আবিষ্কার হয়েছে।
গল্পের ধারায় দেখা যায় কলকাতার এক মধ্যবিত্ত শরীর ও মন পাল্টানোর জন্য গিয়েছে তেলেনাপোতা গ্রামে। এই গ্রামেই রাত্রির অস্পষ্ট অন্ধকারে এক জীর্ণ বাড়ির দোতলায় প্রদীপ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা এক সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত নারীর অভ্যর্থনা তারপর এক শীর্ণা বৃদ্ধার শান্তির জন্য মেয়েকে বিবাহের প্রতিশ্রুতি দান প্রভৃতি ঘটনা একের পর এক ঘটে গেল। অন্ধকার বনচ্ছায়া বিকেলের পড়ন্ত রোদ্দুর পুকুরের পাড়ে শেষ বিদায়ের হাতছানির সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ বিবাহের আকাঙ্ক্ষা যেন কোন শূন্যে মিলিয়ে যেতে শুরু করল। কলকাতায় ফিরে কদিনের জ্বর তারপর পুরানোকে চিরকালের জন্য ভুলে যাওয়া এই মানসিকতা বর্তমানে তার মনের মনিকোঠায় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কাউকে কথা দেওয়ার মতো ব্যাপার অতি তুচ্ছ বলে মনে হয়েছে। এখানকার মধ্যবিত্তের হৃদয় যেন -
চাঁদের চাদর বালির চড়া
এখানে কখনো বাসর হয় না গড়া।
কলকাতায় বসে কল্পনায় ধ্বংস পুরীর ছায়ার মত যামিনী নামক নারীটির চিন্তা অবাস্তব বলেই মনে হয়। এ যেন কারো দুর্বল মুহূর্তের কুয়াশাময় কল্পনা। সেখানে মন বলে কিছু নেই। সেখানে একবার ক্ষণিকের জন্য আবিষ্কৃত হয়ে তেলেনাপোতা আবার চিরন্তর রাত্রের অতলতায় নিমগ্ন হয়ে যায় যামিনী, পলিত কেশ বৃদ্ধার শেষ আকাঙ্ক্ষার বচন। এভাবেই গল্পকার আমাদের তথা মধ্যবিত্তের মন শূন্যতার সার্থক পরিচয়টি ফুটিয়ে তুলেছেন।