সুয়েজ খালে হাঙ্গর শিকার - প্রবন্ধ অনুসরণে হাঙ্গর শিকার এর বর্ণনা দাও।

সুয়েজ খালে হাঙ্গর শিকার - প্রবন্ধ অনুসরণে হাঙ্গর শিকার এর বর্ণনা দাও।

পরিব্রাজক বিবেকানন্দের দ্বিতীয়বার পাশ্চাত্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা লব্ধ রুপায়ন হলো 'পরিব্রাজক'। এই পরিব্রাজক গ্রন্থটি অন্যতম সুয়েজ খালে হাঙ্গর শিকার প্রত্যক্ষ দ্রষ্টা বিবেকানন্দের হাঙ্গর শিকারের এক বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনা। 14 ই জুলাই Red sea পার হয়ে স্বামীজিদের জাহাজ সুয়েজ বন্দরে পৌঁছায়। এই সুয়েজ বন্দর এবং সিডনিতে ছাড়া পৃথিবীর কোথাও হাঙ্গর দেখা যায় না।

 বন্দরে পৌঁছানোর পরের দিন সকালের খাবার শেষ করার আগে লেখক শুনতে পেলেন হাঙ্গরের ভেসে বেড়ানোর খবর। দীর্ঘ অপেক্ষার পর পাইলট ফিস এবং হাঙ্গর চোষক সহ হাঙ্গর দেখা গেল। বিবেকানন্দ কখনোই এর আগে এমন জীবন্ত হাঙ্গর দেখেননি নাম দিলেন বিভীষণ মাছ বা বাঘা। এই হাঙ্গর আর সাপের ওপর মানুষের জাত ক্রোধ। তাই এক ফৌজি যাত্রী হাঙ্গর শিকার এর আয়োজন শুরু করলেন। গোটা জাহাজ খুঁজে তিনি 'কুয়োর ঘটি তোলার ঠাকুরদাদা' কে বরশি হিসেবে জোগাড় করলেন। তাতে শের খানেক শুয়োরের মাংস দড়ি দিয়ে জড়িয়ে বড়শিতে বাধা হল মোটা কাঁছি। কড়ি কাঠের মতো শক্ত কাঠ বড়শির হাত চারেক পরে ফাতনা হিসেবে বাধা হল। ফাতনা সমেত বরশি সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলা হলো।

দীর্ঘ অপেক্ষার পর জাহাজ থেকে প্রায় 200 হাত দূরে মশকের আকারে এক বিশাল হাঙ্গর ভেসে উঠলো। কিন্তু টোপ এর কাছাকাছি দীর্ঘক্ষণ ঘুরাঘুরির পর টোপ মুখে নিল। প্রায় 40 থেকে 50 জন সম্মিলিতভাবে কাছি ধরে প্রানপনে টানতে থাকলো। বরশি ঠিকমতো মুখে না লাগায় হাঙ্গর ধরা পড়লো না। বড়শী সান্নিধ্য পরিত্যাগ করে শ্রী হাঙ্গর চোচা দৌড় অর্থাৎ হাঙ্গর টি অধরাই রইল।

'কিন্তু গতস্য শোচনা নাস্তি' এরপর এল সপারিষদ দ্বিতীয় হাঙ্গর থ্যাবড়া। কিছুক্ষণ ঘুরতে ঘুরতেই 'গোষ্ঠী মন্ডল মধ্যস্থ কৃষ্ণ'র মতো মাংসের টোপটিকে মুখে পুরে নিল। ভালোভাবে টোপ গেলার পর সাবধানে কাছিতে টান দেওয়া হল। বরশি গেল বিঁধে। উৎসাহী যাত্রীদের সহযোগিতায় হাঙ্গরটিকে জাহাজের ডেকে তোলার চেষ্টা করা হলো। কিন্তু 'কি ভারী' থ্যাবড়ার বেরিয়ে আসা নাড়িভুঁড়ি কেটে বোঝা কমিয়ে তবেই জাহাজের ডেকে তোলা হলো। এরপর ফৌজি যাত্রীটি কড়ি কাঠ দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে বাড়ি মেরে মেরে তাকে শান্ত করল। তারপর হাঙ্গরের পেট চেরা হলো রক্তের নদী বইতে লাগলো। ছিন্ন অস্ত্র, ভিন্ন দেহ, ছিন্ন হৃদয় হয়েও সে দীর্ঘক্ষণ কাঁপতে লাগলো। বের হলো হাড়গোড়, মাংস, কাঠ কুটো কত কি।

এভাবেই বিবেকানন্দ প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে হাঙ্গর শিকার এর বাস্তব ছবি এঁকেছেন। অন্যান্যরা সেদিন হাঙ্গর শিকার এর দৃশ্য রীতিমতো উপভোগ করলেও বিবেকানন্দের খাওয়া-দাওয়া দফা মাটি হয়ে গিয়েছিল।

    এই চ্যাপ্টারের আরো অন্যান্য প্রশ্নগুলিও দেখুন

Post a Comment

এই তথ্যের ব্যাপারে আরো কিছু জানা থাকলে বা অন্য কোনো প্রশ্ন থাকলে এখানে লিখতে পারেন ।