এত আলো আমরা তো কোনদিন দেখিনি কে কোন প্রসঙ্গে উক্তিটি করেছে? উক্তিটির তাৎপর্য কি।
রবীন্দ্রনাথের গুরু নাটকের অচলায়তনের নিষ্পাপ বালকদের মধ্যে তৃতীয় বালক এই মন্তব্য করেছে।
ঘোর সংস্কারাচ্ছন্ন আচার সর্বস্ব অচলায়তন কে প্রাণের আলোতে মুক্ত করতে সল প্রাংশুদের সাথে দাদা ঠাকুর ও অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙে সমস্ত বন্ধ জানালা দরজা গুড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করেছিল। দীর্ঘ অন্ধকারে বাসকারী বালকরা হঠাৎ পাখির কলতান উন্মুক্ত হাওয়া ও সূর্যালোকের অবাধ প্রবেশে আনন্দে নৃত্য করে উঠেছিল। তখনই এক বালক এই মন্তব্য করে।
অচলায়তন ছিল কুসংস্কারাচ্ছন্ন মন্ত্র তন্ত্র শাস্ত্র নির্দিষ্ট আচার-রীতি পালনের এক বদ্ধ ঘোর টোপ। শত শত বছর আচার-বিচার পালন করতে করতে অচলায়তনবাসি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। প্রতিমুহূর্তে পাপ আর প্রায়শ্চিত্তের ভয় তাদের তাড়া করে বেড়াতো। প্রাণের আহেক, প্রাণের কথা ভুলে গিয়েছিল তারা। নাটকের শেষে গুরুর আগমনে যখন অচলায়তনের প্রাচীর ও আলোক নীরুধকারী জানালা-দরজা সব ভেঙে পড়ে তখন মুক্ত আলোর বন্যায় কেবল যে শিশু শিক্ষার্থীদের প্রাণ মুক্তির আনন্দে জেগে ওঠে তা নয়, উপাধ্যায়, উপাচার্য ও অন্যান্য নিয়ম তান্ত্রিকেরাও মুক্তির আবেগে নিয়ম বন্ধন ঝেড়ে ফেলে যেন প্রাণকে উপভোগ করে। চতুর্দিকের বদ্ধতা কেটে গিয়ে আলো প্রবেশ করে অচলায়তনে জমাট বাতাস বইতে শুরু করে, পাখিরা গান গেয়ে ওঠে। স্বভাবতই শিশুরা তা দেখে আনন্দে নৃত্য করে ওঠে। এ আলো প্রকৃত জ্ঞানের আলো, স্বাধীনতার আলো। মাথার উপর উন্মুক্ত আকাশ দেখে বালকেরা, এই আকাশ মুক্ত প্রাণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ। বালকদের মুখে উচ্চারিত হলেও এ উচ্ছ্বাস আসলে মহাপঞ্চক ছাড়া অন্যান্য সকলেরই উচ্চারণ।