আমি পাপ করেছি কে কি পাপ করেছিল চরিত্রটির গুরুত্ব আলোচনা করো ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গুরু নাটকে উক্তিটির বক্তা হলো সুভদ্র। অচলায়তনে প্রচলিত ছিল বহুবিধ নিষেধাজ্ঞা এবং সেগুলি অমান্য করাকে পাপ বলে বিবেচনা করা হতো। অচলায়তনের উত্তর দিকে জানালা খোলা নিষিদ্ধ ছিল। কেননা অচলায়তনবাসী বিশ্বাস করতো তাতে উত্তর দিকের অধিষ্ঠাত্রী একজটা দেবী ভয়ঙ্কর ক্রুদ্ধ হবেন। সুভদ্র সে কথা জানত। তবুও সে নিছক বালকোচিত কৌতুহলে সেই জানালা খুলে বাইরের পৃথিবীর দিকে তাকায়। তারপর সেই ভয়ঙ্কর পাপবোধে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এবং কাঁদতে কাঁদতে পঞ্চকের কাছে তার পাপের কথা জানায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গুরু নাটকে অনেকগুলি শিক্ষার্থী বালক চরিত্রের সৃষ্টি করেছেন। তাদের মধ্যে সুভদ্র বিশেষ গুরুত্ব ও স্বাতন্ত্র্যের দাবি রাখে। অচলায়তনে যে অর্থহীন সংস্কার বিশ্বাস গুলি প্রচলিত ছিল যুগ-যুগান্ত ধরে সেখানকার শিক্ষকরা যেমন সেগুলি অন্ধভাবে মেনে চলত তেমন তারা সে গুলোকে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে গেঁথে দিতে সক্ষম হয়েছিল। তাদের এটাও শেখানো হয়েছিল ওই অনুশাসন গুলি না মানলে পাপ হয় এবং প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ কঠিন শাস্তিও ভোগ করতে হয়। এই ধারারই একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল সুভদ্র। যদিও পাপ পুণ্য সম্পর্কে তার ধারণা অন্যদের থেকে বিশেষ আলাদা ছিল না তবুও নেহাতই শিশু সুলভ কৌতূহল নিয়ে সে ৩৪৫ বছরের বন্ধ জানালা খুলে এক অভূতপূর্ণ কান্ড ঘটিয়েছিল। আসলে সুভদ্রের এই কৌতুহল সেই জীবন-জিজ্ঞাসা নামান্তর যার দ্বারা তাড়িত হয়ে মানুষ নানা যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছে। সুভদ্র তাই এই নাটকে অন্ধ সংস্কারের বন্ধ কূপে প্রথম ভাঙ্গনের কারিগর, বিপ্লবের অগ্রদূত।