দাদা ঠাকুর চরিত্রটির মধ্যে গুরু নাটকের মূল সুর ধ্বনিত হয়েছে আলোচনা করো।
গুরু নাটকের নায়ক পঞ্চক, কিন্তু এই নাটকের নাট্যকার রবীন্দ্রনাথের আত্ম প্রতিনিধি দাদা ঠাকুর। শারোদৎসব থেকে মুক্ত ধারা পর্যন্ত রবীন্দ্রনাটক ঠাকুরদা, বাউল ধনঞ্জয় বৈরাগীর যে ভূমিকা সেই ভূমিকাটি এই নাটকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে দাদাঠাকুর চরিত্রেও।
প্রথম দৃশ্যে দাদা ঠাকুর অনুপস্থিত। কিন্তু সেখানে অচলায়তনে গুরুর আগমন সংবাদে গুরুত্ব প্রকাশ করা হয়েছে। বালক সুভদ্রের বিরুদ্ধাচরণ আসলে সেই গুরুর আগমনের যথার্থ অভ্যর্থনা। অর্থাৎ গুরুর পরিচয় ও স্বরূপ সম্পর্কে একটি রহস্য ঘনীভূত হয়েছে প্রথম দৃশ্যে।
দ্বিতীয় দৃশ্যে অচলায়তনের সীমান্তের বাইরে অন্তজ জুনকদের মধ্যে আমরা দেখি দাদাঠাকুর কে। তিনি যুনকদের মানবিক হৃদয় ধর্মে উদ্বুদ্ধ করেন। কিন্তু যখন স্থবির পত্তনের রাজা চন্ডক কে হত্যা করেন তখন দাদাঠাকুর রুদ্র দেবতার মত অচলায়তনের প্রাচীরকে ধ্বংসের ডাক দেন। অর্থাৎ ভিন্ন ধর্ম ও বিদ্রোহী মূর্তির সমন্বয় ঘটেছে দাদা ঠাকুর চরিত্রে।
তৃতীয় দৃশ্যে আমরা জানতে পারি দর্শকদের মধ্যে যিনি মানবতার বাণী প্রচার করেন সেই গোসাই ঠাকুরই যুনকদের দাদা ঠাকুর। অর্থাৎ দাদা ঠাকুর ও গোসাই ঠাকুর উভয়ই অচলায়তনের স্থবিরতা ভেঙে সবাইকে প্রেম ও মানব ধর্মে উদ্বুদ্ধ করতে চান। আবার দেখা যায় অচলায়তনে তিনি গুরু তিনি স্বয়ং নিয়ম তন্ত্রের বিরোধী। সুতরাং দাদা ঠাকুর, গোসাই ও গুরু অভিন্ন ব্যক্তি।
এই নাটকে গুরু বা মানবমুক্তির ধারণাটি প্রধান কথা হলেও আসলে গুরুর স্বরূপ প্রস্ফুটিত হয়েছে দাদা ঠাকুর চরিত্রের মধ্য দিয়ে।