বাংলা সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান লেখ।
বঙ্কিমচন্দ্রের হাতেই বাংলা উপন্যাসের শিল্প সার্থক পূর্ণ প্রতিষ্ঠা। বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে যে সম্ভাবনা প্যারীচাঁদ মিত্র, ভূদেব মুখোপাধ্যায় এর মধ্যে সামান্যতম দেখা দিয়েছিল , বঙ্কিমচন্দ্র তা বিস্ময়কর বিকাশ লাভ করেছিল।
বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গুলি কে তিনটি পর্বে ভাগ করা যায়।
প্রথম পর্বে ইতিহাসের প্রাচীন পটভূমিতে কাল্পনিক প্রণয় কাহিনীর প্রাধান্য। 'দুর্গেশনন্দিনী' বঙ্কিমের প্রথম উপন্যাস। এই উপন্যাসের প্রস্তুতিকালীন অপরিণত চিহ্ন স্পষ্ট। কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী এই পর্বের রচনা।
দ্বিতীয় পর্বের উপন্যাস গুলির বেশিরভাগই সামাজিক। বিষবৃক্ষ, ইন্দিরা, চন্দ্রশেখর, রজনী কৃষ্ণকান্তের উইল প্রভৃতি এই পর্বের রচনা।
তৃতীয় পর্বের উপন্যাস গুলিতে গীতার নিষ্কাম ধর্মের এবং অনুশীলন তত্ত্বের সঙ্গে প্রেম বাসনার দ্বন্দ্ব রূপ পেয়েছে। এই পর্বের উপন্যাস গুলি মূলত দেশাত্মবোধক। আনন্দমঠ, দেবী চৌধুরানী, সীতারাম, রাধারানী প্রভৃতি এই পর্বের উপন্যাস। বঙ্কিমচন্দ্রের সর্বশেষ উপন্যাস "রাজ সিংহ" একমাত্র খাটি ঐতিহাসিক উপন্যাস।
বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গুলি গঠন রীতিতে নাট্য ধর্ম ও কাব্য সৌন্দর্যের সহায়তা গ্রহণ করেছে। তার উপন্যাস গুলিতে মহাকাব্যিক বিস্তার লক্ষ্য করা যায়। সমস্ত উপন্যাসেই একটি পূর্ণাঙ্গ সুবলিত কাহিনী আছে। তাঁর উপন্যাসে শেক্সপিরীয় নাটকের প্রভাব পড়েছে। কেবল উনবিংশ শতাব্দীর নয় সমগ্র বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তার সমপর্যায়ের উপন্যাসিক খুব বেশি নেই।