বীরাঙ্গনা শব্দের অর্থ কি ? জনা কে কি প্রকৃত বীরঙ্গনা বলা যায়? - নীলধ্বজের প্রতি জনা
বীরাঙ্গনা শব্দের অর্থ কি ? জনা কে কি প্রকৃত বীরঙ্গনা বলা যায়?
কবি মাইকেল মধুসূদনের বীরাঙ্গনা কাব্যে 'নীলধ্বজের প্রতি জনা' কবিতা টি অন্যান্য পত্রিকা গুলির মধ্যে উৎকৃষ্ট বলে বিবেচিত। যে নারী রণক্ষেত্রে সাহস ও পরাক্রম প্রদর্শন করতে পারে সাধারণত তিনি বীরাঙ্গনা নামে পরিচিত।
করুন ও বীর রসের সঙ্গে রোদ্র রস মিশিয়ে মধুসূদন জনা চরিত্র কে এমন দীপ্তমান করে সৃষ্টি করেছেন তাকে যথার্থই বীরাঙ্গণা বলা যায়। অন্যায় যুদ্ধে যখন অর্জুন প্রবীরকে হত্যা করেছেন তখন থেকেই পুত্রের মৃত্যুর প্রতিবিধিৎসাতে প্রবীরমাতা এক নির্মম জননী হয়ে উঠেছেন। জনা চেয়ে ছিলেন রাজা নীলধ্বজ সগৌরবে তার সমুন্নত মস্তক বন্ধ তীর মতো ঊর্ধ্বে উত্তরিত করে থাকবেন কিন্তু পুত্রের মৃত্যুর প্রতিশোধ না গ্রহণ করে তিনি পুত্র হত্যা কে নরনারায়ন ও জনসেবা করেছেন। সখির মুখে রাজসভার বিবরণ শুনে ভেঙে রোষে তার হৃদয় উদ্বেল হয়ে উঠেছে। তার পত্রযে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায় ফেটে পড়েছে আহত সঙ্গিনীর মতো তিনি লিখেছেন যে -
তব সিংহাসনে
বসিয়েছে পত্রজা রিপু মিত্রত্তম এবে
সেবিছে যতনে তুমি অতিথি রুনে
কি লজ্জা !
কিন্তু তাতেও নীলধ্বজের হৃদয়ে বিন্দুমাত্র ঘাত্রতেজ উদ্দীপ্ত হয়নি। তখন শোকার্ত বীরাঙ্গনার লেখনি সহসা যেন বিষ উদ্বীরন করল। তিনি অর্জুনের অন্যায় যুদ্ধ ও দূর্বলতার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন কিন্তু তাতেও নীলধ্বজ নির্বিকার। তখন জনা রচনা করলেন কুন্তি ও দ্রৌপদীর কলঙ্ক গাঁথা।
স্বামীর ব্যবহারে পীড়িত নারীর মর্মবেদনা ও আত্মমর্যাদা এই পত্রিকার মূল সুর। জোনার যে বিলাপ এ সাধারন পুত্র শোকাতুর নারীর লাভ নয়- এ তেজস্বিনী নারীর অগ্নিগর্ভবিলা যেখানে অশ্রু নেই আছে অগ্নিময়ী প্রভাব। পুত্রের মৃত্যু তার কাছে মর্মান্তিক কিন্তু একটি মাত্র ক্ষত্রিয় সংস্কার পুত্রের মৃত্যু অপেক্ষা বড় হয়ে তার হৃদয় কে অন্য পথে চালিত করেছে। তার আক্ষেপিত চিত্ত তাই নীলধ্বজের প্রতি অজস্র অগ্নি বর্ষণ পড়েছে। ক্ষত্রিয় ধর্ম কি তা নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন নীলধ্বজ কে -
তুমি হায় মিত্র ভাবে
পরশ সে করো যাহা প্রবীরের লোহে
লোহিত, ক্ষত্রিয় ধর্ম একি, নৃমনি ?
জনার এই বীরত্বের অভিমান ক্ষুব্ধ চিত্তের অগ্নিজ্বালা ক্রুদ্ধ সর্পিনির মত প্রকাশ পেয়েছে এবং এই প্রতিহিংসার রুদ্রতা ও তেজস্বী মননশীলতার জন্য জনাকে প্রকৃত বীরঙ্গনা বলা যায়।