বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতায় যে বাউল সাধনার গুহ্য তত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছে তা আলোচনা করো ।

বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতায় যে বাউল সাধনার গুহ্য তত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছে তা আলোচনা করো ।

বঙ্গীয় সঙ্গীত সাহিত্যে বাউল গান একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বাউল গানের শ্রেষ্ঠ প্রতিভা লালন ফকিরের বাড়ির কাছে আরশিনগর পাঠ্য লালন গীতিটি বাউল সাধনারই এক সুস্পষ্ট রূপায়ণ।

বাউল সাধনা এক মিশ্র সাধনা। বাউলরা দেহাত্মবাদী দেহ ধারস্থিত মনের মানুষ তাদের একমাত্র সাধনা যোগ্য, প্রত্যেক মানুষের অন্তরে অন্য এক মানুষ লুক্কায়িত রয়েছেন, যিনি মনের মানুষ। যিনি প্রেমময় কল্যাণ স্বরূপ, আনন্দ স্বরূপ, 'এই মানুষ এই' 'সেই মানুষের' বাস। বাউলরা মনে করেন আত্মা পরমাত্মার অংশ, আত্মা পরমাত্মা ভিন্ন দেহ জেনোনা। সেই মনের মানুষের সাথে মিলনের জন্য বাউলদের আকুতি।

বাড়ির কাছে আরশিনগর কবিতা টি সম্পূর্ণ বাউল তথ্য সমৃদ্ধ একটি রূপক কবিতা। সাধক কবির বাড়ির কাছে আরশিনগর সেখানে বাস করে এক পড়শী অর্থাৎ বাড়ি হল কবির দেহ বা মানব দেহ আর আরশিনগর হলো দেহ অভ্যন্তরস্থ মন তথা পবিত্র দেবভূমি - The Poor Human Body Is The Temple Of Living God, সেখানে বাস করে এক পড়শী আর পড়শীই তো তার এই মনের মানুষ, ভাবের মানুষ, আলোক মানুষ, রবীন্দ্রনাথের কাছে যা জীবন দেবতা। এই মানুষের হস্তপদ স্কন্দমাতা নেই অর্থাৎ ঈশ্বর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হিন অরূপ নিরাকার। ভক্তি আর বিশ্বাসের রং ও রেখায় তিনি মূর্ত হয়ে ওঠেন। এই ঈশ্বর কখনো জলে ভাসে কখনো শূন্যে অবস্থান করেন অর্থাৎ তিনি জল, স্থল অন্তরীক্ষ সর্বত্র বিরাজমান। ভক্ত কবির একান্ত মনবাঞ্ছা এই পড়শীর সাথে মিলনের। কেননা তাহলে কবির জমযাতনা দূর হতো। কিন্তু 'গ্রাম বেরিয়ে অগাধ পানি' এই অগাধ পানি হল মনের মালিন্য বা পার্থিব মায়া মমতার বন্ধন ও বিষয় আসক্তি। যে মালিন্য বা বিষয় আসক্তি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কোন তরণে অর্থাৎ মন্ত্র তন্ত্র তিনি জানেন না। তাই মিলনের আকুতি অপূর্ণ থেকে যায়। 'আমি একদিনও না দেখিলাম তারে' সে আর লালন একখানে রয় তবু লক্ষ যোজন ফাঁক। ঈশ্বরের সাথে কবির এক অসেতু সম্মত ব্যবধান। সুতরাং চির অপ্রাপ্তির আক্ষেপে কবিতার শেষ হয় সত্য হয়ে থাকে কেবল ভক্তের আকুতি।

    এই চ্যাপ্টারের আরো অন্যান্য প্রশ্নগুলিও দেখুন

Post a Comment

এই তথ্যের ব্যাপারে আরো কিছু জানা থাকলে বা অন্য কোনো প্রশ্ন থাকলে এখানে লিখতে পারেন ।