বাংলা নাটকের ইতিহাসে মাইকেল মধুসূদনের পরেই নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র অবতীর্ণ হন। প্রধানত মধুসূদন ও দীনবন্ধুর সাধনায় বাংলা নাটক প্রাথমিক পর্বে নানাবিধ দুর্বলতা ও অসঙ্গতি কাটিয়ে তার পথ খোঁজার পালা শেষ করে এক ঐতিহাসিক ভবিষ্যতের দিকে পা রাখে।
দীনবন্ধুর প্রথম নাটক নীলদর্পণ (1860)। ইংরেজ নীলকরেরা অতিরিক্ত মুনাফার লোভে কিভাবে বাংলার নীলচাষীদের উপর অত্যাচার চালাত তারই মর্মন্তুত চিত্র স্থান পেয়েছে এই নাটকে। বিংশ শতকের পূর্বে জাতির রাষ্ট্রনৈতিক চেতনার উপর অপর কোন নাটকি এত বড় প্রভাব ফেলতে পারেনি। নানাবিধ দুর্বলতা থাকলেও চাষীদের চরিত্র অঙ্কনে, পদিময়রানি, গোপী নায়কদের মত ইতর মানুষদের গোপন অন্ত:বেদনার উদঘাটনে ও এদের প্রাণবন্ত সংলাপের ক্ষেত্রে নাট্যকার বিশেষ প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। নাটকটি কে "আঙ্কেল টমস কেবিন" এর সাথে তুলনা করা হয়।
রোমান্টিক কমেডি :
এরপর দীনবন্ধুর নবীন তপস্বিনী, কমলে কামিনী ও লিলাবতি তিনটি রোমান্টিক কমেডি সবদিক থেকেই ব্যর্থ। স্মরণীয় বঙ্কিমচন্দ্রের উক্তি 'যাহা সূক্ষ্ম, কোমল, মধুর, অকৃত্রিম, প্রশান্ত, করুন সেসকলে দিনবন্ধুর তেমন অধিকার ছিল না।
প্রহসন :
দিনবন্ধুর তিনটি প্রহসন 'সধবার একাদশী', 'বিয়ে পাগলা বুড়ো', 'জামাই বারিক' ব্যর্থ হয়নি।। দীনবন্ধুর নাটকের কল্পনা দৈন প্রকট। তিনি মুখ্যত বর্তমানের রূপকার, বস্তুনিষ্ঠ শিল্পী। ভদ্র চরিত্র অপেক্ষা ভদ্রেতর চরিত্রের মনে নাট্যকারের স্বচ্ছন্দ বিচরণ। সর্বোপরি তাঁর সংলাপ বিকৃতি, অসঙ্গতি ও কৌতুক এই সার্থক।
অনেক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু নাটককে তিনি যে বাস্তবতার শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন তাতে পরবর্তীকালে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, ফিরোদ প্রসাদ বিদ্যাবিনোদের মত নাট্যকার এর আবির্ভাব অবারিত হয়েছিল।