সন্ন্যাসী বা ফকির বিদ্রোহের কারণ লেখ।
ভূমিকা:
ঐশ্বরিক চিন্তা, চেতনা ও কার্যের দ্বারা সিদ্ধিলাভের সঙ্গে নিযুক্ত সম্প্রদায়রা সন্ন্যাসী বা ফকির নামে পরিচিত। উপনিবেশিক শাসনকালে শাসকবর্গের কর্মচারী দ্বারা অত্যাচারিত বা নিপীড়িত সন্ন্যাসী বা ফকিরা অতিষ্ঠ হয়ে বিদ্রোহ শুরু করেছিল।
সময়কাল:
১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ফকির বা সন্ন্যাসী বিদ্রোহের সময়কাল।
ফকির বিদ্রোহের কারণ:
(১) জমি থেকে উচ্ছেদ:
সন্ন্যাসী বা ফকিরা যে সকল জমিতে চাষ বাস করত সেই সকল জমির ওপর কোম্পানির ইজারাদাররা চরা হারে রাজস্ব আদায় করত।
(২) তীর্থ কর আদায়:
সন্ন্যাসীরা দলবেঁধে বিভিন্ন স্থানে তীর্থযাত্রায় যেত। কিন্তু তাদের ওপর সরকার জোর করে তীর্থকর আদায় করলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ ঘনীভূত হয়।
(৩) রেশম ব্যবসায় বাধা:
বাংলা ও বিহারের অনেক সন্ন্যাসীরা রেশম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু কোম্পানির কর্মচারীরা তাদের ওই ব্যবসায় বাধা দিত।
(৪) সন্ন্যাসীদের হত্যা:
১৭৭১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সরকার ১৫০ জনের অধিক সন্ন্যাসীদের নিহত করলে তারা চরম ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
(৫) বাংলায় প্রবেশ নিষেধ:
বাংলার চব্বিশ পরগনা জেলা ছিল সন্ন্যাসী বা ফকিরদের মিলন স্থান। কিন্তু কোম্পানির কর্মচারীরা বাংলায় তাদের প্রবেশে বাধা দিলে ক্ষুব্ধ সন্ন্যাসীরা বিদ্রোহে ফেটে পড়ে।
বিদ্রোহ ও নেতৃত্ব:
অবশেষে সন্ন্যাসীরা বাধ্য হয়ে ভবানী পাঠক, মজনু শাহ, চিরাগ আলী প্রমুখ এর নেতৃত্বে প্রায় ৫০ হাজার সন্ন্যাসী বিদ্রোহ শুরু করেছিল (১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে)। রংপুর ছিল এই বিদ্রোহের প্রথম কেন্দ্র পরে জলপাইগুড়ি, যশোহর _খুলনাসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে ফকিরাবাদ সন্ন্যাসীরা বিদ্রোহের শামিল হয়েছিল।
ফকির বিদ্রোহ ব্যর্থতার কারণ:
(১) নেতৃত্বের দুর্বলতা: সন্ন্যাসী বিদ্রোহের ব্যর্থতার মূলে ছিল নেতৃত্বের অভাব ও দুর্বলতা।
(২) অস্ত্রশস্ত্রের অভাব: সন্ন্যাসীদের উপযুক্ত অস্ত্রশস্ত্রের অভাব থাকায় আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কাছে যুদ্ধে হার মেনেছিল।
(৩) পরিকল্পনার অভাব: বিদ্রোহ কে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সন্ন্যাসীদের পরিকল্পনায় যথেষ্ট অভাব ছিল।
মূল্যায়ন: সুতরাং, সন্ন্যাসী বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ সরকারের প্রতিক্রিয়াশীল কার্যকলাপের বিরুদ্ধে মুক্তির জেহাদ। সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসে এই বিদ্রোহের উল্লেখ রয়েছে।
নিচের প্রশ্নগুলি দেখতে পারেন :