ভারতে জাতীয়তাবাদ বিকাশে স্বামী বিবেকানন্দের বর্তমান ভারতের ভূমিকা লেখ।
ভূমিকা:
ভারতের রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রাপ্তির উগ্র সমর্থক স্বামী বিবেকানন্দ। বিদেশি শাসনাধীন ঘুমঘোরে আচ্ছন্ন হতাশা ক্লিষ্ট ভারতবাসীর মনে প্রগাঢ় দেশ প্রেম, আত্মসচেতনতা ও আত্মবিশ্বাসের প্রেরণা জাগাতে তার বর্তমান ভারত গ্রন্থটি অনন্য। বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ এজন্য তাকে আমাদের জাতির গঠন কর্তা বলেছেন।
প্রকাশকাল:
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ‘বর্তমান ভারত' গ্রন্থটি বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। কিন্তু আগেই উদ্বোধন পত্রিকা তে এক এক সংখ্যা প্রকাশিত হতো।
জাতীয়তাবাদ বিকাশের দিক:
(১) প্রবর্তন গত দিক:
তিনি তার এই গ্রন্থে ভারতে আগত বিদেশী জাতি সমূহের দ্বারা পরিবর্তন গত আচার-ব্যবহার, কর্মপ্রণালী পরিবর্তন, ভারতের শাসন প্রণালীর দোষগুণ, প্রাচ্য পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব, স্বদেশ মন্ত্র, আমায় মানুষ করো প্রকৃতির উপর আলোকপাত করেছেন।
(২) গৌরবোজ্জ্বল অতীত:
তিনি তার এই গ্রন্থে বৈদিক যুগ থেকে ব্রিটিশ শাসন কাল পর্যন্ত দীর্ঘ ভারতের অতীত ঐতিহ্য ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করেছেন।
(৩) ভারতবাসীর ঐক্য:
তিনি উপলব্ধি করেন, পরাধীন ভারতে মুক্তির জন্য প্রয়োজন ভারতবাসীদের ঐক্য। এজন্য তিনি ভারতীয় সমাজে বর্ণ বৈষম্য, দলিত ও শুদ্রদের প্রতি বঞ্চনার তীব্র নিন্দা করে ঐক্যের কথা বলেন।
(৪) শূদ্র জাগরণ:
শুদ্রদের জাগরন বলতে তিনি সাধারণ মানুষের উত্থানকে চিহ্নিত করেছেন। দেশের সকল সাধারণ মানুষ জাগলে জাতীয়তাবাদের স্ফুরণ ঘটবে এবং দেশমাতৃকার সেবার পথ প্রশস্ত হবে।
(৫) মানবপ্রেম:
তার ‘বর্তমান ভারত' গ্রন্থে অন্যতম দিক ছিল মানবপ্রেমের সঞ্চার। এ জন্য তিনি বলেন, _ “অর্জ, মূর্খ, দরিদ্র সকল ভারতবাসী আমার ভাই"।
(৬) স্বদেশ প্রেম:
(১) স্বাধীনতার বীরের জন্য, কাপুরুষের জন্য নয়। ভারতবাসীর কাছে তাঁর নির্দেশ কাপুরুষতার ত্যাগ করো, বীরত্ব, বসুন্ধরা বীরদের জন্য।
(২) স্বদেশবাসীকে জায়গাতে গিয়ে বলেন আমাদের কোনো কিছুই ব্যাক্তিগত সুখের জন্য নয়। আমরা সকলকে মায়ের জন্য বলি প্রদত্ত।
(৩) দেশ ও দেশবাসীকে একাত্ম করতে বলেন,__ ভারত আমার দেশ, আমার প্রাণ, ভারতের দেব-দেবী আমার ঈশ্বর, সমাজ আমার শিশু সজ্জা, যৌবনের রূপবন, বার্ধক্যে বারানসি, ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ ও আমার কল্যাণ।
(৪) একেবারে শেষে এই গ্রন্থে দেবতাকে প্রার্থনা করে বলেন,____“আমাদের মনুষত্ব চাই, গুণাবলী চাই, আত্মশক্তি আত্মবল চাই এবং আমাদের মানুষ হতে হবে ।
মূল্যায়ন: সুতরাং, স্বামী বিবেকানন্দের ‘বর্তমান ভারত' গ্রন্থ ও ভারতবাসীর জাগরনের পাশাপাশি জাতীয়তাকে সঞ্চার ঘটায় চরম উৎসেচক ছিল। এই গ্রন্থটি শুধু স্বাধীনতা যুগের নয় আজও মানুষের কাছে সমান প্রসঙ্গিত ও প্রাপ্তি।
নিচের প্রশ্নগুলি দেখুন :
- গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিভাবে ভারতের জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটাতে চেয়েছেন?
- জাতীয়তাবাদ বিকাশে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভারতমাতা চিত্রের ভূমিকা লেখ।
- ভারতে জাতীয়তাবাদ বিকাশে হিন্দু মেলার বা চৈত্র মেলার ভূমিকা লেখ।
- ভারতে জাতীয়তাবাদ বিকাশে আনন্দমঠ এর ভূমিকা লেখ।
- পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে বেসরকারি উদ্যোগের ভূমিকা লেখ।