গোরা উপন্যাসের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিভাবে ভারতের জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটাতে চেয়েছেন?
ভূমিকা :
রবীন্দ্র সাহিত্য সৃষ্টির মধ্যে দীর্ঘতম সাহিত্য হল গোরা উপন্যাস। এই উপন্যাসের গোরা চরিত্রের মধ্য দিয়ে তিনি ঔপনিবেশিক ভারতে স্বদেশিকতা ও জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটাতে চেয়েছেন।
প্রকাশকাল:
বাংলায় স্বদেশী আন্দোলন চলাকালে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে তিনি এই উপন্যাসটি প্রকাশ করেন প্রবাসী পত্রিকায়।
জাতীয়তাবাদ বিকাশের দিক:
(১) ভারতের সত্য পরিচয়:
লেখকের ধারণা সত্যনিষ্ঠ, ত্যাগ বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য সম্ভব। এর মধ্য দিয়ে তিনি মনে করেন মিলন, মানবতা বিশ্বজনীন ভালোবাসা সর্বভূতের প্রতি ভারতের সত্যের পরিচয় ও মুক্তির প্রকাশ ঘটানো সম্ভব হবে। তিনি নায়ক গোরাকে ভারতবর্ষের সত্য উপলব্ধি সকলকে করিয়ে দেওয়ার জন্য নায়ক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
(২) দেশ প্রেম:
গোরা নিষ্ঠাবান, গোঁড়া, ব্রাহ্মণ, কৃষ্ণ দয়ালু আনন্দময়ীর সন্তান হলেও ছিলেন একজন দেশ প্রেমিক ও রাজনৈতিক কর্মী। ভারতে সীমাহীন দুঃখ, দারিদ্র, অভাব, অনটন, প্রকৃতি সত্বেও ইংরেজদের সঙ্গে মারামারি কে শ্রেয় বলে মনে করত। আর সঙ্গী হিসাবে সমাজের মানুষকে আপনজন হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।
(৩) গোরার আদর্শ:
রবি ঠাকুর সমাজের শিক্ষিত শ্রেণীর সামনে গোরাকে দাঁড় করিয়ে সমাজ,ধর্ম, দেশ সম্পর্কিত গোরার আদর্শ ও বক্তব্যকে তুলে ধরতে গিয়ে বলেন,_______“হিন্দু এক জাতি, দল নয় এই জাতির তো কোন সংজ্ঞায় দাঁড়া সীমাবদ্ধ নয় আর হিন্দু ধর্ম মায়ের মত নানাভাবে ও নানা মতের মানুষকে কোল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
(৪) জাতীয়তাবোধে জাগ্রত করা:
তিনি দেশবাসীকে জাতীয়তা বোধে উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে ঔপনিবেশিক শাসনে বর্বরতা ও নির্যাতনে এর বিষয়টি তুলে ধরেন। এর থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য ভারতবর্ষকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করে বলেন,___“মা তুমি আমার মা, আমি ভারতীয়"।
মূল্যায়ন: সুতরাং বলা সঙ্গত হবে যে, গোরা উপন্যাসের মধ্য দিয়ে কবি ঠাকুর সমন্বয়বাদী দেশাত্মবোধ ও জাতির সংকীর্ণতা দূরে সরিয়ে মিলনের মধ্য দিয়ে ভারতবাসীকে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন যা এই উপন্যাসের সার্থকতা।
অন্যান্য পোস্টগুলো দেখুন :