ইতিহাসের উপাদান হিসেবে জীবনের ঝরাপাতা সম্পর্কে লেখ।
ভূমিকা:
কবিগুরু রবি ঠাকুরের বরদি স্বর্ণকুমারী দেবীর কন্যা ছিলেন সরলা দেবী চৌধুরানী। তিনি একাধারে ছিলেন কবি , সাহিত্যিক , শিক্ষাবিদ
অপরদিকে ছিলেন দেশ প্রেমিকা। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী তার আত্মজীবনী গ্রন্থ “জীবনের ঝরাপাতা" ইতিহাসের উপাদান হিসেবে আজও অম্লান।
জীবনের ঝরা পাতার বিষয়:
(১) শৈশব শিক্ষা:
মাত্র সাড়ে সাত বছরের সরলা দেবী চৌধুরানী বেথুন স্কুলের ছাত্রী হন। এরপর তার সঙ্গীতচর্চা ,সাহিত্য সাধনা, বন্দেমাতরম গানটির সুর দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে তার পারদর্শিতা প্রতিফলিত হয়।
(২) সামাজিক দিক:
তার স্মৃতিকথায় উঠে এসেছে তৎকালীন বনেদি পরিবারের নিয়মকানুন, নারী শিক্ষার হালচার নারী শিক্ষার কেন্দ্রে সংবৃহ, ব্রাহ্মসমাজ ও তার কার্যাবলী ইত্যাদি।
(৩) অর্থনৈতিক শোষণ:
তার এই গ্রন্থে তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশরা কিভাবে নীলচাষী, শ্রমিক খেটে খাওয়া মানুষ , কুলি মজুর এর ওপর শোষণ অত্যাচার চালাত তাও তার গ্রন্থে আচলিত হয়েছে।
(৪) রাজনৈতিক ইতিহাস:
তারই আত্মজীবনী থেকে সমকালীন ভারতে অনেক ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায় ।বন্দেমাতরম ধ্বনি স্বদেশী পণ্য প্রচার উদ্দেশ্যে লক্ষীর ভান্ডার স্থাপন প্রভৃতির উল্লেখ রয়েছে।
(৫) সাংস্কৃতিক ইতিহাস:
তিনি ভারতী পত্রিকা সম্পাদনা করেন দেশের সংস্কৃতি উন্নতির সঙ্গে কিভাবে হিন্দু মুসলিম সংস্কৃতির ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা যায়। তার এই চেষ্টাই উল্লেখ রয়েছে পত্রিকাতে। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দ এই দুই মনীষীর প্রতি সরলতার কার্যকলাপে তথ্য পাওয়া যায়।
(৬) শক্তি সাধনার উদ্ভূত :
তিনি বাঙালি যুবকদের শক্তি সাধনায় উদ্বুদ্ধ করেছে এইভাবে --
> ভারতী পত্রিকায় তিনি বাঙালিকে মৃত্যুর চর্চার আহ্বান জানিয়ে বলেন বিলেতি ঘুষি বনাম দেশী কিল।
> প্রতাপাদিত্য উৎসব, উদয়াদিত্য উৎসব ,বীরাষ্টমী ব্রত ইত্যাদির মাধ্যমে বিপ্লবীদের শক্তি সাধনা উদ্বুদ্ধ করতে।
মূল্যায়ন
সুতরাং জীবনের ঝরাপাতা ইতিহাসের ভেতর আরেক ইতিহাস। গ্রন্থটি সেই যুগের শ্রেষ্ঠ মনীষীদের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। লেখিকার লিখন শৈলীর জন্য এই গ্রন্থটি উনিশ শতকে ইতিহাস রচনার এক উল্লেখযোগ্য উপাদান হিসেবে চিহ্নিত।
Read ALso :