টিকা লেখ: চুয়াড় বিদ্রোহ
ভূমিকা:
বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া , ধলভূম ও উড়িষ্যার বিভিন্ন অঞ্চলের জমিদারদের অধীন রক্ষীবাহিনীতে নিযুক্ত কর্মচারীরা চুয়াড় নামে পরিচিত। এরা সেবার বিনিময়ে মিস করবা পাইকার জমি ভোগ করতো। উপনিবেশিক শাসন ও ইংরেজদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে চুয়াড় বিদ্রোহ শুরু করেছিল।
চুয়াড় বিদ্রোহের পর্ব:
চুয়াড় বিদ্রোহ দুটি পর্বে শুরু।
(১) প্রথম পর্ব: ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে
(২) দ্বিতীয় পর্ব: ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে
পেশা:
উপজাতি চুয়ার রা ছিল পেশায় কৃষিজীবী। এদের কিছু অংশ জমিদারদের অধীন রক্ষী সেনাবাহিনীতে কাজ করতো কিন্তু নতুন ইংরেজ ব্যবস্থায় তারা জমি-জায়গা অধিকার থেকে উচ্ছেদিত হয়।
চুয়াড় বিদ্রোহের কারণ:
নির্যাতন ও শোষণ:
ব্রিটিশ সরকার ও তাদের কর্মচারীরা আদিবাসী এই চুয়াড়দের ওপর শোষণ ও নির্যাতন চালাতো ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ ঘনীভূত হয়ে ওঠে।
জমি থেকে উচ্ছেদ:
ঔপনিবেশিক শাসনে ইংরেজরা দরিদ্র চুয়াড়িদের জমির মালিকানা শর্ত বাতিল করলেও তারা জমি থেকে উচ্ছেদ দিতে হয়। ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
রাজস্ব বৃদ্ধি:
ইজারাদাররা জমিদারদের জমির দারিদ্র বাতিল করার পাশাপাশি অতিরিক্ত হারে রাজস্ব আদায় করলেও জমিদাররা অক্ষম হয়ে ওঠে। রাজস্ব না দিতে পারায় তাদের জমিদারী বাতিল করে।
পেশা থেকে বিতারণ:
সরকার মহাজন তাদের পেশা থেকে বিতাড়িত করলে তারা বিদ্রোহে ফেটে পড়ে।
বিদ্রোহে নেতৃত্ব:
ধল ভোমের রাজা জগন্নাথ সিং এই বিদ্রোহ প্রথম শুরু করলে এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দানে এগিয়ে আসে রামপুরের জমিদার দুর্জন সিংহ, অচল সিংহ, মেদিনীপুরের রানী শিরোমণি প্রমুখ। বিদ্রোহের আগুন একশটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল। বাঁকুড়া, বীরভূম, ধলভূম ও উড়িষ্যার বেশ কিছু অঞ্চলে বিদ্রোহীরা সরাসরি প্রশাসন ভেঙ্গে ফেলেছিলো।
বিদ্রোহের অবসান:
এই বিদ্রোহ কে দমন করার জন্য সরকার চরম দমন-পীড়ন নীতি নেন। রানী শিরোমণি কে হত্যা করে দুর্জন সিংহ সহ অন্যান্য নেতাদের গ্রেপ্তার করলে বিদ্রোহের অবসান ঘটে।
মূল্যায়ন: সুতরাং এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও সরকারের যথেষ্ট চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাধ্য হয় সরকার শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে চুয়াড়দের নিয়ন্ত্রণ রাখতে বিষ্ণুপুর শহরটি কে কেন্দ্র করে জঙ্গলমহল নামে একটি পৃথক জেলা গঠন করে এই সূত্রে বিদ্রোহের গুরুত্ব তাৎপর্য পূর্ণ।
অন্যান্য প্রশ্নগুলি দেখুন :