বিধবা বিবাহ আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা

বিধবা বিবাহ প্রবর্তনে বিদ্যাসাগরের অবদান লেখ।


ভূমিকা: 

ভারতীয় সমাজে হিন্দু নারীর অকারন বৈদ্য প্রস্তুত লাঞ্চন অসহায়তা বিদ্যাসাগরের মরার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি উপলব্ধি করেন বৈদ্য যৌন ব্যাভিচার ও সামাজিক কলুষতা নিরাকরণ এর জন্য বিধবা বিবাহ একমাত্র পথ হিসেবে চিহ্নিত।

বিধবা বিবাহ প্রবর্তন এর দিক:

শাস্ত্র থেকে প্রমাণ:
 বিদ্যাসাগর ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে পরাশর সংগৃহীত থেকে উদ্ধৃত করে বলেন বিধবা বিবাহ সম্পূর্ণরূপে স্বাস্থ্যসম্মত। তিনি স্পষ্ট করে আরো বলেন সামাজিক ব্যভিচার ও অকাল বৈধব্য থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় বিধবার পুনর্বিবাহ।

সংবাদপত্রে মতপ্রকাশ:
 অক্ষয় কুমার দত্তের তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা তিনি এই বিবাহের পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারি মাসে বিধবা বিবাহ প্রচলন উচিত কিনা এই প্রস্তাব তিনি প্রকাশ করেন। সর্বশুভকরী পত্রিকা এই বিবাহের পক্ষে যুক্তি কথা প্রকাশ করেন।

জনমত গঠন:

 বিধবা বিবাহ প্রচলন এর জন্য তিনি জনমত গঠনে সচেষ্ট হন এবং ৩৬৭৬৩ জনের স্বাক্ষর সহ 1 ঘন আবেদন পত্র ব্রিটিশ সরকারের কাছে জমা দিয়ে এই বিবাহের পক্ষে আন্দোলন চালান।

বিরোধিতা: 
বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ প্রচলন বিরুদ্ধ বিরোধিতা করতে এগিয়ে আসেন রাধাকান্ত দেব ও তার ধর্মসভা। এই বিবাহ বন্ধ করার জন্য রাধাকান্ত দেব ৩০টি পুস্তক প্রকাশ করেন কিন্তু বিদ্যাসাগরের যুক্তিকতা ধোপে তা ব্যর্থ হয়।

বিধবা বিবাহের পক্ষে সওয়াল: 
বিধবা বিবাহের পক্ষে সওয়াল হন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ,বিচারপতি দারোকা নাথ মিত্র, অক্ষয় কুমার দত্ত, দক্ষিণা রঞ্জন মুখোপাধ্যায় ,রাজনারায়ণ বসু প্রমুখ। ঈশ্বর গুপ্ত ছড়া লিখে গেয়ে বেড়ান,_____

            “বাদিয়াছি দলাদলি লাগি আছে গোল
                 বিধবার বিয়ে হবে বাজি আছে ঢোল"

 বিধবা বিবাহ আইন প্রবর্তন:
 ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ২৬ শে জুলাই বড়লাট লর্ড ডালহৌসির তত্ত্বাবধানে বিধবা বিবাহ আইন প্রবর্তিত হয়। এই আইনের খসড়া পত্র দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজনারায়ণ বসু সহ প্রমুখ প্রথম স্বাক্ষর দান করেন।

বিধবা বিবাহ: 
এই বিবাহের প্রথম পাস্তুরায়ন ঘটে সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক সি চন্দ্র বিদ্যারত্ন সঙ্গে বর্ধমানের বিধবা পাত্রী কালী দেবীর মধ্যে (১৬৬৭ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বর মাসে)। এরপর বিদ্যাসাগরের নিজ পুত্র নারায়ন চন্দ্র সংগীত ভবন সুন্দরী নামক বিধবার বিবাহ দিয়েই বিবাহের প্রচলন ঘটায়।

প্রচার:
 বিধবা বিবাহের প্রচার চালাতে থাকে গরুর গাড়ির চালক , নৌকা বাইতে বাইতে মাঝি, লাঙ্গল দিতে দিতে চাষী ও তাঁতি প্রমুখ। তাদের গানের ছত্র ছিল____

        “বেঁচে থাকো বিদ্যাসাগর চিরজীবী হয়ে
       সদরে করেছে রিপোর্ট বিধবাদের হবে বিয়ে"।

বাংলার বাইরে এই বিবাহ:
 বাংলার বাইরে মহারাষ্ট্র, আর্য সমাজ, প্রার্থনা সমাজ এই বিবাহের পক্ষে প্রচার চালায়।

মূল্যায়ন: সুতরাং নিম্নে বলা সংগত হবে যে সমাজে প্রগতিশীল চিন্তা-ধারা বিকাশে ও সমাজকল্যাণে বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ প্রবর্তন ভারতীয় সমাজে অম্লান স্বাক্ষর। ডক্টর অমলেশ ত্রিপাঠী যে কারণে তাকে
     “Traditiond modernisen"বলে অভিহিত করেছেন।

নিচের প্রশ্নগুলি দেখতে পারেন :

Post a Comment

এই তথ্যের ব্যাপারে আরো কিছু জানা থাকলে বা অন্য কোনো প্রশ্ন থাকলে এখানে লিখতে পারেন ।