সৈয়দ আহমেদ খানের নেতৃত্বে আলীগড় আন্দোলন আলোচনা করো।
উনিশ শতকের শেষ পর্যায়ে ভারতের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রথম দিকে মুসলমান সমাজের মধ্যে প্রাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। পিছিয়ে পরা মুসলমানদের শিক্ষার আলোতে নিয়ে আসতে সাহায্য করেন স্যার সৈয়দ আহমেদ খান, মুসলমান সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আলীগড় আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
উনিশ শতকের প্রথম দিক থেকে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার শুরু হয়। এই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে হিন্দুদের জীবনযাত্রা উন্নত হয়, কিন্তু সেই সময় মুসলমানরা দুটি প্রাশ্চাত্য শিক্ষা থেকে দূরে ছিল।
1. ধর্মীয় ক্ষেত্রে প্রাশ্চাত্য শিক্ষা ছিল ধর্মীয় বিরোধী।
2. ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতি পূর্বে মুসলমানদের শাসন ছিল ইংরেজি, তাই তাদের শাসনের অবসান ঘটায়। সেই রাগে মুসলমানরা প্রথমদিকে ইংরেজদের শহীদ সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছিল।
বিভিন্ন শিক্ষা সংস্থা স্থাপন
মুসলমানদের মধ্যে প্রাশ্চাত্য ভাবধারা ও যুক্তিবাদ প্রসারের জন্য সৈয়দ যে কর্মসূচি গ্রহণ করেন তা আলীগড় আন্দোলনের পরিচিত। এর উদ্দেশ্যে একাধিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।
1. 1864 খ্রিস্টাব্দে গাজীপুরে ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
2. 1864 খ্রিস্টাব্দে সাইন্টিফিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করে ইংরেজি গন্থাবলি কে উর্দুতে অনুবাদ করেন।
3. 1871 খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে তাহ্জীব আল ফলাক নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।
4. 1875 খ্রিস্টাব্দে আলিগড় অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি
জীবনের প্রথম দিকে সৈয়দ আহমেদ হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের কথা প্রচার করতেন। তিনি বলতেন হিন্দু-মুসলিম এক জাতি ভারতমাতার দুইচক্ষু। বাঙ্গালীদের তিনি ভারতমাতার মুকুট বলতেন ওই সময় ভারতের স্বায়ত্ত শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটিশদের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আমূল পরিবর্তন আসে তিনি প্রচার করে বলে যে, হিন্দু-মুসলিম দুটি পৃথক জাতি নয়। মুসলিম সমাজকে তিনি ইংরেজি সরকারের প্রতি আনুগত্যের কথা বলেন। তিনি জানান ইংরেজদের হাতে মুসলমানদের নিরাপত্তা আলীগড় কলেজ এ আগে হিন্দু ও মুসলিম সকলের পড়ার সুযোগ ছিল পরে শুধু মুসলমানদের পড়ার সুযোগ ছিল।
আলীগড় আন্দোলনে থিওডোর বেক এর ভূমিকা
সৈয়দ আহমেদ কে আলীগড় আন্দোলনের সাহায্য করেছিলেন আলিগড় কলেজের অধ্যক্ষ থিওডোর বেক।
অধ্যক্ষ বেগ সম্পাদিত ইনস্টিটিউট গেজেট নামক পত্রিকায় হিন্দু ও কংগ্রেস বিদ্বেষ প্রচারিত হয়।
1893 খ্রিস্টাব্দে বেকের উদ্যোগে মোহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল ডিফেন্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা হয়, মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় ছিল এর উদ্দেশ্য।
আন্দোলনের নীতি
চারটি মৌলিক নীতির উপর ভিত্তি করে আলীগড় আন্দোলন প্রচারিত হয়েছিল।
1. হিন্দু ও মুসলিম দুটি পৃথক বিরোধী স্বার্থ।
2. স্বায়ত্তশাসন বা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চ সহকারী পদে মুসলিমরা ছিল স্বার্থবিরোধী।
3. ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে মুসলিমদের জন্য সুযোগ সুবিধা আদায় করা।
4. কংগ্রেসের বিরোধিতা করে ইংরেজদের জয় করা
এইভাবে সৈয়দ আহমেদ আলীগড় আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলিম সমাজকে শিক্ষার আলো তে নিয়েছিল এবং ভারতের দ্বিজাতি তত্ত্বের অবসান করেছিল।