রাজা রামমোহন রায় টীকা লেখো | অথবা শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন এর ভূমিকা
রাজা রামমোহন রায় টীকা লেখো | WBCHSE HS History Important Questions
ভূমিকা
দেশ যখন অন্ধকার কুসংস্কারে আচ্ছন্ন, অন্ধবিশ্বাস যখন তার জীবনকে যুদ্ধ করেছিল, সমাজ, ধর্মশিক্ষা, সকল ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা হয়েছিল । সেই সঙ্কট মুহূর্তে রাজা রামমোহন রায়কে ইতিহাসের পাতায় তাকে ভারতের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন। রাজা রামমোহন রায় সংস্কৃত, ইংরেজি, গ্রিক, ফরাসি, আরবি, প্রভৃতি ভাষাতে দক্ষ ছিলেন।
ধর্ম সংস্কার :
হিন্দু ধর্মীয় গোঁড়ামি রক্ষণশীলতা যাগযজ্ঞ আচার-অনুষ্ঠান রামমোহনকে ব্যতীত করেছিল। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ পাঠ এর ফলে তিনি একেশ্বরবাদী নিরাকার সমর্থক হয়ে উঠেন। তিনি হিন্দু ধর্মের সংস্কারের জন্য বেশি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
1. সনাতন হিন্দুশাস্ত্র অধ্যয়ন করে তিনি প্রমাণ করলেন পৌত্তলিকতা পুরোহিত ও আচার সর্বস্বতা হিন্দু ধর্মের মূল কথা নয়।
2. নিরাকার বন্ধের উপায় হল শ্রেষ্ঠ ধর্ম, একেশ্বরিবাদ সর্ব ধর্মের মূল কথা।
3. একেশ্বরবাদ এর সমর্থনে তিনি ফার্সি পুস্তিকা তু আপত উল মুয়াহিদ্দিন রচনা করেন।
4. বাংলা বেদান্তের ভাষ্য রচনা করেন এবং ইস কট কিন মুণ্ডক উপনিষদের বাংলা অনুবাদ করেন।
সমাজ সংস্কার :
রামমোহন হিন্দু সমাজে জাতিপ্রীত অস্পৃশ্যতার তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি "বঙ্গশ্রী" গ্রন্থটি বাংলা অনুবাদ করে প্রচার করেন যে জাতিভেদ প্রথা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তিনি অসবর্ণ বিবাহ সমর্থনে বিভিন্ন পুষ্টি রচনা করেন।
তৎকালীন হিন্দু সমাজে মৃত স্বামীর চিতায় তার জীবিত স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারা হতো এই প্রথা সতীদাহ প্রথা নামে পরিচিত। এই প্রথার বিরুদ্ধে বিরোধিতা করেন রাজা রামমোহন রায়, তিনি সেই সময় 300 জন নাগরিকের স্বাক্ষর বিশিষ্ট একটি আবেদনপত্র বড়লাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এর কাছে দাবি জানায়। এই আবেদনে সাড়া দিয়ে প্রিন্টিং 1829 খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বর এই আইন দ্বারা সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করে।
শিক্ষা সংস্কার :
এদেশে প্রাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে রামমোহন উৎসাহী সমর্থক ছিলেন। তিনি শিক্ষাকে সমাজকল্যাণ ও যান্ত্রিক উন্নতির জন্য ব্যবহার করেছিলেন।
ব্রিটিশ সরকার এদেশি শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন, হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছিলেন।
1822 খ্রিস্টাব্দে তিনি রেজিশিক্ষার জন্য অ্যাংলো হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
সাহিত্য অবদান :
শ্রীরামপুর মিশনারি বাংলা গদ্যে কাঠামো তৈরি করেছিলেন তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন রাজা রামমোহন রায়। এইজন্য তাকে বাংলা গদ্য সাহিত্যের জনক বলা হয়। তিনি 1815 খ্রিস্টাব্দে থেকে 1823 খিস্টাব্দের মধ্যে 23 টি গন্থ রচনা করেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বেদান্ত গ্রন্থ, বেদান্তসার ভট্টাচার্যের শহীদবিচার, বজ্রসূচী প্রভৃতি।
সংবাদ ক্ষেত্রে অবদান :
রামমোহন রায় ভারতীয় সাংবাদিকতার অগ্রদূত ছিলেন। তিনি বাংলা ইংরেজি ও ফরাসী ভাষায় বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমাচার দর্পণ, বাংলা ভাষায় সংবাদ কৌমুদী, ফরাসি ভাষায় মিরাতুল আকবর প্রভৃতি লিখেন।
রাজনৈতিক সংস্থান :
রামমোহনের রাজনৈতিক ভাবনা মন্টেস্কু, ভলতেয়ার, পেইন্টস চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল। ভারতীয় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটনার জন্য আরও 40 বছরে দেশে থাকা উচিত সাংবাদিক নিয়মতান্ত্রিক অধিকার অর্জন বিশ্বাসী ছিলেন।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতিত হয় যে উনিশ শতকের কুসংস্কারচ্ছন্ন হিন্দু সমাজে সাংস্কৃতিক নবজাগরণ সামাজিক উন্নয়ন ও শিক্ষার ক্ষেত্রে রামমোহন ছিলেন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অগ্রদূত স্বরূপ।